Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভাষা ও সংস্কৃতি,
ভাষা ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানতে নিম্নের লিংকগুলোতে ক্লিক করুন
https://bn.wikipedia.org/wiki
https://www.google.com.bd/?
বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতি 

gws_rd=cr,ssl&ei=sv7GVaGiBZfkuQSR753IAw#q=%E0%A6%AD%

E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A6%BE+%E0%A6%93+%E0%A6%

B8%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%83%

E0%A6%A4%E0%A6%BF+%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%95%

E0%A6%BE+%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE

 

ঢাকা জেলাঃ ঢাকা জেলার ভাষাকে সাধারণত: পূর্ববঙ্গীয় ভাষা নামে অভিহিত করা হয়। কেননা যদিও এ অঞ্চলের ভাষা মুগল বাংলা ভাষারই অঞ্চল। তবে কথোপকথনে এর ঢঙ একটু ভিন্ন এবং এ ভিন্নতার রীতিগুলি স্থানীক ভাষার জন্ম দিয়েছে, যেমন বিভিন্ন শব্দের সাথে ই অক্ষর যোগ করে ব্যবহারের ফলে ভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। যেমন ‘করিয়াছ’ শব্দটিকে ‘কইরাছ’ ব্যবহার। তাহলেও এ স্থানীক ভাষা বাংলা ভাষার অন্তর্গত একটি চমৎকার উদাহরণ যা অনুকরণীয়ও বটে। বাংলাভাষা আধুনিক রূপ নেয়ার পরে উনবিংশ শতাব্দীতে ঢাকা জেলার বহু লেখক ও সাহিত্যিক তাদের সাহিত্য কর্মের মাধ্যমে বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে, যেমন- হরিশচন্দ্র মিত্র, দীনবন্ধু মিত্র ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে ঢাকা জেলায় বাংলাভাষায় উত্তমমানের সাহিত্য চর্চা অতীতের সাধুভাষার পরিবর্তে  চলিত ভাষায় ব্যবহার স্থায়ীত্ব লাভ করেছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য মহানগরী ঢাকার এক শ্রেণীর জনগোষ্ঠী বাংলা, উর্দু, হিন্দী, ফার্সী মিশ্রিত এক প্রকার ভাষার ব্যবহার করে যা ঢাকাইয়া ভাষা বা উপভাষা নামে পরিচিত। তবে এই ভাষাটির চর্চা ধীরে ধীরে কমে আসছে  (দেখুন ঢাকাই উপভাষা প্রবাদ প্রবচন কৌতুক ছড়া, এশিয়াটিক সোসাইটি, এপ্রিল ২০১২)

ঢাকার সংস্কৃতি আবহমানকাল থেকে বিবর্তিত হয়ে এক বর্ণাঢ্য রূপ নিয়েছে। এই সংস্কৃতির পেছনে ঢাকা অঞ্চলের আবহাওয়া, জলবায়ু, স্থান প্রভাব রেখেছে তেমনি পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্ম যেমন বৌদ্ধ, হিন্দু, ইসলাম, খ্রিষ্টান ধর্ম এবং বিশ্বব্যাপি নানা  স্থান থেকে আগত বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষের ভাষা আচার আচরণ খাদ্যাভাস, পোষাক পরিচ্ছদ, সংস্কৃতি, সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে গড়ে উঠেছে। ঢাকা জেলার সংস্কৃতি যেমন একাধারে বাংলাদেশের সংস্কৃতিরই অংশ তবুও এর কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেমন খাদ্যাভাসে, পোষাকে, সংগীতে, লোকগীতিতে, শিল্পকর্মে, খেলাধুলা, স্থাপত্যে, হস্তলিপি এবং অন্যান্য সৃষ্টিশীল কর্মক্ষেত্রে। তবে অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায় এ সংস্কৃতি উদার, অসাম্প্রদায়িক এবং নিজ স্বকীয়তায় বৈশিষ্টপূর্ণ।

 

নারায়ণগঞ্জ জেলাঃ নারায়ণগঞ্জ জেলা ঢাকা শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় জেলার জনসাধারণ প্রচলিত বাঙলা ভাষায় কথা বলে। তবে এ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মিশ্র/ আঞ্জলিক ভাষার ব্যবহার দেখা যায়। নারায়ণগঞ্জ  সংস্কৃতি সমৃদ্ধ জেলা । প্রাচীনকাল থেক এ জেলায় জারীগান, মুরশীদী  গান, ভাওয়াইয়া গানসহ আঞ্চলিক অনেক গান প্রচিলত আছে।

বেদে সংস্কৃতি

মেঘনা নদীর চঞ্চল স্রোতধারা থেকে একটি শাখানদী বেরিয়ে এসে সোনারগাঁওয়ের ভাটিবন্দর রঘুভাঙ্গা এলাকায়। এখানে নৌকার ওপর বসতি স্থাপন করেছে বেদে সম্প্রদায়। এখানে রয়েছে ১২টি বেদের নৌকা। তারা এখানে রয়েছে প্রায় এক বছর যাবৎ।

পুরনো নীতি অনুযায়ী এখনো চলছে বেদেদের বিয়ে। বিয়ের আগ মুহূর্তে বরকে গাছের মগডালে উঠিয়ে কনেকে গাছের নিচে রাখা হয়। এ সময় বর গাছের উপর থেকে চিৎকার করে কনেকে বলে আমি গাছ থেকে পড়ে মারা গেলাম। তখন কনে উচ্চৈঃস্বরে বরকে গাছ থেকে নেমে আসতে বলে। তুমি গাছ থেকে পড়ে মরে (মারা) যেও না। অমি তোমাকে সারাজীবন খেটে খাওয়াব। তখনই বর গাছ থেকে নেমে আসে।

(সূত্রঃ দৈনিক পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন ৯ ডিসেম্বর ২০১২)

 

গাজীপুর জেলাঃ

প্রাচীন কালে  চীনা পরিব্রাজক যখন বাংলাদেশ ভ্রমন করেন তখন সারা বাংলায় আর্য ভাষার প্রচলন হয়।  ভাওয়ালেও (গাজীপুর জেলা) তখন আর্য ভাষা সুপ্রতিষ্ঠিত  হয় । বাংলা  একাডেমী থেকে  প্রকাশিত ‘বাংলা ভাষা’  নামক গবেষণা গ্রন্থে  বিশিষ্ট লেখক  ডঃ হুমায়ুন আজাদ বর্ণনা করেছেন আঠারো শতকের ত্রিশের দশকে  ঢাকার ভাওয়ালে বসে  পর্তুগীজ পাদ্রি ম্যানুয়েলদা  আসসম্পসাও রচনা করেছিলেন  বাংলার দ্বিভাষিক অভিধান ও খন্ডিত ব্যকরণ  কাজটি নাগরীর গীর্জাতে বসে  সম্পন্ন করেছেন। ভাওয়ালের কথ্য ভাষায় যা বাংলা  একাডেমী ডঃ সুনীতি কুমার  চট্টোপাধ্যায়সহ সকল গবেষকরা স্বীকৃতি দিয়েছেন ।

জেলার আঞ্চলিক ভাষার নমুনাঃ

অহনো        এখনো             কান্দস          কাঁধ

অইলে         হলে              কতা            কথা

বাংলা গদ্যের জন্মস্থান ভাওয়াল । বাংলা ভাষার ইতিহাসে আদি ও প্রথম গদ্যে রচিত পুস্তকটি  ‘ব্রাষ্ফন রোমান ক্যাথলিক’ সংবাদ নামে বিশেষ পরিচিত ।

 

সংস্কৃতিঃ

ভাওয়াল  সংগীতঃ ভাওয়াল জমিদারের পৃষ্ঠপোষকতায় ভাওয়াল সংগীত প্রতিষ্ঠা লাভ করে । বিশেষতঃ সম্রাট আকবরের সভাসদ তানসেনের পুত্র বংশীয় রবাবীয়া, ধ্রুপদীয়া ও ওস্তাদ কাশেম আলী খাঁ ভাওয়াল রাজবাড়ীতে সংগীতের চর্চা করে  ভাওয়ল সংগীতকে প্রসিদ্ধ হতে  সহায়তা করেন।

দোম অন্থনির পালাগানঃ অতীতে গাজীপুর অঞ্চলে  এ পালা গান প্রচলিত ছিল । ধর্ম প্রচারের জন্য গণমানুষদের কথামালা নিয়ে এ পালাগান রচিত হত । ভাওয়ালের মানুষ ছিল পালাগান, জারী,সারি,ভাটিয়ালী গান প্রিয় । দোম অন্থনি দো রোজারিও এ পালগান রচনা করেন যা ধীরে ধীরে ভাওয়াল ছাড়াও দেশে নানা স্থানে ছাড়িয়ে পড়ে ।

 

গাজীর গীত : পূর্বে সমগ্র গাজীপুর অঞ্চলে  গাজীর গীতের প্রচলছিল । বাংলার সুলতান  সিকান্দর শাহের  প্রথম  পুত্র  গাজীর জীবন কাহিনী নিয়ে এই গীত রচিত হয়।

প্রাচীন পুঁথি সাহিত্যঃ পুঁথি সাহিত্য এ অঞ্চলে  পূর্বে খুবই জনপ্রিয় ছিল । সোনাবানের পুঁথি, মোছন্দালীর পালা, গাজীর পালা, গফুর বাদশা, বানেছা পরীর পালা, ভাওয়াল সন্যাসীর পালা প্রভৃতি এ অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য পুঁথি সাহিত্য।

লোকজ সংস্কৃতিঃ গাজীপুর অঞ্চলে  অলংকার শিল্প , আসন শিল্প , কাথা শিল্প, পাখা শিল্প, কাঠ শিল্প ,মাদুর শিল্প, ধুপ শিল্প, খেজুর পাতার পাটি শিল্প ইত্যাদি কুটির শিল্প প্রচলন রয়েছে ।

উৎসবঃ বিভিন্ন পার্বনে বিভিন্ন ধরণের উৎসব উদযাপিত হয়  এবং মেলার আয়োজন করেন । বৈশাখ মাসে বৈশাখী মেলা, হেমন্তে  নবান্ন  উৎসব,চৈত্র  সংক্রান্তিতে মেলার  আয়োজন করা হয় ।

ঘরবাড়ীঃ গাজীপুর জেলার  গ্রামাঞ্চলের  মাটির দেয়ালের ঘর দেখতে পাওয়া যায় ।  তবে শহর অঞ্চলে  দালান-কোঠা  রয়েছে ।

গাজীপুর  জেলায় কোচ সম্প্রদায়ের আদিবাসীর  বসবাস রয়েছে । এদের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে ।

মেঘমাগাখরার মৌসুমে আল্লাহর কাছে মেঘ পার্থনার জন্য বয়স্ক, যুবক, কিশোর, শিশুরা সিংগা, ভাংঙ্গা কুলা, ভাঙ্গা হাড়ি,পাতিল ঢোল,ঝুড়ি, মুখোশ, বস্তা ইত্যদি নিয়ে সন্ধা থেকে রাত ২/৩টা পর্যন্ত সামান্য পানি নিয়ে কাদা করে মেঘের জন্য প্রার্থনা করত। এই প্রার্থণাই অঞ্চলিক ভাবে মেঘ মাগা বা মেঘমাঘন প্রার্থ্যনা নামে পরিচিত। বহু পূর্ব হতে এই জেলায় মেঘমাগার প্রচলন চলে আসছে।

গাজীপুর জেলার মসলিন ইতিহাস: ঢাকার শ্রেষ্ঠ প্রসিদ্ধ মসিলিন উৎপাদনকারী এলাকাগুলোর মধ্যে ছিল ঢাকার সোনারগাঁ, পশ্চিমে ধামরাই এবং উত্তরে ভাওয়ালের বর্তমান গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার অন্তর্গত তিতাবাটি ও কিশোরগঞ্জের জংগলবাড়ি। এই কাপড় এত সূক্ষ্ম ছিল যে, চল্লিশ হাত লম্বা ও দুই হাত চওড়া এক টুকরো একটি আংটির মধ্যে দিয়ে নেওয়া যেত। কাপাসিয়া তিতাবাটি অঞ্চলের ফুটি কারর্পাস কেবল ভারতেই শ্রেষ্ঠ ছিল না , ছিল সমগ্র বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যার দ্বার বিশ্বের সেরা সূক্ষ্ম মসলিন তৈরী হত।

গাজীর গীত: গাজীপুর জেলার অন্যতম বিখ্যাত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো গাজীর গীত ।মুসলমানেরা ধর্মীয়ভাবদ্বারায় এই গাজীর গীত গেয়ে বেড়াত। পর্যায়ক্রমে যাঅনেকের পেশায় পরিণত হয়।উল্লেখযোগ্য গাজীর গীত হলো:

দেওয়ানী, কোন গুণে তারাইয়া লও,

ভাই, গাজীর নামে,

গাজী কালু দু্ই ভাই আড়াঙ্গি উড়াইল।

জংলায় যত বাঘ দৌড়িয়ে পালাইলো।

ছড়া: জেলারসর্বত্রছড়ার প্রচলন  বহু প্রাচীনকাল হতে। আনুষ্ঠানিক জগৎ,মানবজীবন, কৃষি বা জলবায়ু , বর্ষা, আবার অনানুষ্ঠানিক ছেলে ভুলানো, শিশু ভয় দেখানো, দাম্পত্য জীবন, খেলা ও কৌতুক প্রভৃতি নিয়ে নানা ধরণের ছড়া রয়েছে। এরকমই একটি ছড়া:

‍‘শোন ছেরি কই তোরে

শ্যাম, পিরিতি করিছ না,

হায় পিরিত তোরে ছারব না।’

 

ধান কাটার গীত: গাজীপুর জেলার গ্রামঞ্চলে ধান কাটার সময়ে নানা ধরনের পল্লী গীত গাওয়া হয়। এতে একজন হাল ধরে বাকীরা ধরে দোহার। ধান কাটতে ফুর্তি করা আর কাজের উৎসাহের জন্য এই গান গাওয়া হয়। যেমন-

“আমার চেংড়া বন্দ্ধুর গলায় গেন্দা ফুলের মালা

ধান কাটাতে আইলে পড়ে, গায় ধরে জ্বালা !

ওরে হের গলায় ঝলাও ধানের আডির মালা।’’

 

ধনীর চিড়া: গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে পূর্ব হতে খুব পাতলা চিড়ার ব্যাপক সুখ্যাতি রয়েছে দেশ জোড়া। এই চিড়ার নাম ধনীর চিড়া। কালিয়াকৈর উপজেলার ধনীর রাণী নামের এক মহিলা উদ্ভাবন করেছিলেন এই চিড়া। সময়টা ছিল ঊনবিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি। এখনো এই চিড়া কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যায়। কথিত আছে যে, এই চিড়া ১৮৮৬ খৃ. ইংলেন্ডের রাণীর জন্ম দিনে ভারতবর্ষের পক্ষ হইতে অন্যতম উপঢৌকন হিসাবে প্রেরিত হইয়াছিল।

 

মুন্সীগঞ্জ জেলাঃ বাংলাদেশের  মানচিত্রে  মুন্সীগঞ্জের  অবস্থান দেখতে  অনেকটা কেন্দ্রীয় দ্বীপের মত। দক্ষিণে  পদ্মা, পূর্বে মেঘনা , উত্তরে  ধলেশ্বরী  শীতলক্ষ্যা ও পশ্চিমে কালিগঙ্গা এবং আড়িয়াল বিল এ জেলাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার কারনে  এখানে  পৃথক এক উপভাষা  গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ব্যবসা বাণিজ্য , শিক্ষা সংস্কৃতি, এবং পেশাগত প্রয়োজনে অন্যান্য উপভাষা  অঞ্চলে এখানকার মানুষের যাতায়াত   এবং অন্য উপভাষা অঞ্চলের লোকদের আগমন  এবং বসবাসের কারনে ভাষাগত আদান প্রদান ও ভাষারীতির গ্রহন বর্জনের  মাধ্যমে  আজ হয়ে উঠেছে মিশ্র ভাষা । মুন্সীগঞ্জ জেলা রাজধানী  ঢাকার নিকটবর্তী হওয়ার কারনে  ঢাকায় প্রচলিত ঢাকার  প্রত্যন্ত অঞ্চলের উপভাষার  সঙ্গে বিনিময় হয়েছে খুব বেশী।  মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া পূর্বে  কুমিল্লা জেলার  অন্তর্গত ছিল বলে  তা কুমিল্লা অঞ্চলের ভাষা দ্বারা প্রভাবিত।

     ভৌগলিক ও অন্যান্য সামাজিক বিষয়ের  বিবেচনায়  মুন্সীগঞ্জ( বিক্রমপুর) একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল। এক সময়ে বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই নিরংকুশ প্রভাব রেখেছিল  সমগ্র বঙ্গের উপর। সুদুর অতীতকাল থেকেই মূলত ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র  হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করলেও সংগীত , নাটক, নৃত্য , সাহিত্য চর্চার মধ্য  দিয়ে কর্মচঞ্চল মুন্সীগঞ্জের সংস্কৃতিমনা প্রতিটি মানুষের জীবন। এখানকার পদ্মা ,মেঘনা, ধলেশ্বরীর বাঁকে বাঁকে গড়ে ওঠা জনপদের মানুষ , তাদের জীবন ও জীবিকা, তাদের  সুখ-দু:খ , হাসি -কান্না এসব নিয়ে গড়ে উঠেছে মুন্সীগঞ্জের সংস্কৃতিক পরিমন্ডল। এক সময়  শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় , যাযাবর , মানিক বন্দোপাধ্যায়, সত্যেন সেন এর মত বড় মানের সাহিত্যিকদের পদচারনা ও বর্তমান সময়ে ড. হুমায়ুন আজাদ, রাবেয়া খাতুন ও ইমদাদুল হক মিলন শুধু মুন্সীগঞ্জকেই নয় বাংলাদেশ ও বাংলা সাহিত্যকে করেছেন সমৃদ্ধ। পঞ্চাশ ষাট দশকে যারা একক প্রচেষ্টায় সংগীতের  ক্ষীণ ধারাটি ধরে রেখেছিলেন  তারা হলেন  বদরে আলম ও সদানন্দ বারুলী। প্রাক স্বাধীনতা যুগে মুন্সীগঞ্জের সংগীত চর্চা ছিল গুটি কয়েক পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। স্বাধীনতা উত্তরকালে শহরের হরিন কুটিরের দোতলায়  প্রতিষ্ঠা হয়েছিল মুন্সীগঞ্জের প্রথম সংগীত স্কুল ‘‘বাঁশরী সংগীত বিদ্যালয়’’ । এটি প্রতিষ্ঠার পেছনে অবদান রেখেছেন অধ্যাপক সুনির্মল  চক্রবর্তী , জয়ন্স কুমার স্যানাল, মতিউল ইসলাম হিরু, এ. ওয়াই. এম মহসীন, কৃষ্ণচন্দ্র পাল , সর্দার নিসার আহমেদ , শহীদুল্লাহ শহীদ ও প্রয়াত হাসান আলী। এই বিদ্যালয়েই প্রথম পদ্ধতিগত ভাবে সংগীত শিক্ষা দেয়া হয়। বাঁশরীর পথ ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় মুন্সীগঞ্জ সংগীত একাডেমী ,সোফিয়া সংগীত বিদ্যালয়। তৈরী  হতে থাকে  শিল্পী ও প্রশিক্ষক।

  নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে শহরের  জগধাত্রী মন্দির সংলগ্ন  নাট্য মঞ্চ অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। পঞ্চাশ  দশকের আগে থেকেই বেশ কিছু নাটক এখানে মঞ্চস্থ হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুন্সীগঞ্জের নাট্যাঙ্গণে সুনিপুনভাবে নাট্য চর্চায় ব্রত দলটির নাম প্রবাহ নাট্যগোষ্ঠী। তাছাড়া ঘাস-ফুলুনদী ও সৌখিন নাট্যচক্র মুন্সীগঞ্জের নাট্যাঙ্গনের পথিকৃত। এদের পথ ধরেই  মুন্সীগঞ্জে গড়ে উঠে অনিয়মিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিকগোষ্ঠী, মুন্সীগঞ্জ থিয়েটার, থিয়েটার সার্কেল সহ অনেক নাট্য সংগঠন। মুন্সীগঞ্জের নৃত্য সংগীত ও নাটকের মতই সমৃদ্ধ।

 

   যেসব সাংস্কৃতিক সংগঠন মুন্সীগঞ্জজেলায় বিভিন্ন সময়ে সংস্কৃতির বিকাশ ও লালনে অবদান রেখেছে সে সমস্ত সংগঠনের নাম নীচে দেয়া হলো:

 (১)  জেলা  শিল্পকলা একাডেমী  , (২) প্রবাহ নাট্যগোষ্ঠী,   (৩) ঘাস ফুল  নদী সাহিত্য  ও  সাংস্কৃতিকগোষ্ঠী,       

  (৪)  অনিয়মিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী , (৫)সৌখিন নাট্যচক্র, (৬) মুন্সীগঞ্জ সংগীত একাডেমী, (৭) মুন্সীগঞ্জ থিয়েটার, (৮) মুন্সীগঞ্জ থিয়েটার সার্কেল, (৯) চিত্রাংকন বিদ্যালয় , (১০)সোফিয়া সংগীত বিদ্যালয়, (১১) জয় জয়মত্মী জলসা সংগীত একাডেমী, (১২) মুন্সীগঞ্জ সিটি অংকন বিদ্যালয়, (১৩) নাট্যবিন্দু , বালিগাও।

মুন্সীগঞ্জ তথা বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এমন কয়েকজন মুন্সীগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ত্বের নাম:

চাষী নজরুল ইসলাম( চলচ্চিত্রকার), আবদুল জব্বার খান( বাংলা চলচ্চিত্রের জনক), টেলি সামাদ( চলচ্চিত্র অভিনেতা)

আবদুল কাদের( বিশিষ্ট অভিনেতা), গওহর জামিল(নৃত্য শিল্পী ও নৃত্য পরিচালক), মোহাম্মদ আবু তাহের( কথা সাহিত্যিক ও নাট্যকার), আবদুর রহমান বয়াতী( বাউল শিল্পী), সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়( চলচ্চিত্র অভিনেত্রী), লায়লা হাসান ( নৃত্য  শিল্পী ও অভিনেত্রী ), নাজমা আনোয়ার ( অভিনেত্রী ), ফেরদৌস  ওয়াহিদ ( জনপ্রিয়  কন্ঠশিল্পী ),

হাবিব( সংগীত পরিচালক ও গায়ক), বালাম(সংগীত পরিচালক ও গায়ক), শিরীন বকুল( অভিনেত্রী), রিয়া( নৃত্য শিল্পী ও মডেল),শিল্পী আব্দুল হাই(সংগীত , চিত্র, নাটক), শ্রী জিতেন চক্রবর্তী(নাটক), সরবিন্দু সেন(নাটক, আবৃতি), শ্রী মন্মথ মুখার্জি(সংগীত , তবলা), গিয়াস উদ্দিন আহমেদ( নাটক), মিজানুর রহমান ( সংগীত, নাটক)।

 

টাঙ্গাইল জেলাঃ টাঙ্গাইলের ভাষা ও সংস্কৃতি টাঙ্গাইলের ভূ-খন্ড বৈচিত্রময়। জেলাটি ঐতিহ্যবাহী ও বহু বৈচিত্রমন্ডিত সুপ্রাচীন জনপদ। বাংলাদেশের জেলাসমূহের মধ্যে ১৯তম জেলা টাঙ্গাইল। আগে এই জেলার ভূ-খন্ডটি ছিল নাসিরাবাদ জেলা (বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলা)। ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীন টাঙ্গাইল আদিকালে আসাম কামরূপ জেলার অংশ ছিল। এখানে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ মে মহকুমা স্থাপন হয়। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে মহকুমাটি স্থানান্তর হয়। আর সেই মহকুমাটি ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১ ডিসেম্বর জেলায় পরিণত হয়। টাঙ্গাইল জেলার উত্তরে ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলা দক্ষিণে ঢাকা ও মানিকগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে যমুনা নদী ও সিরাজগঞ্জ জেলা। এজেলার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা। পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে রয়েছে যমুনা ধলেশ্বরী, ঝিনাই, বৈরান লৌহজং, মরা আত্রাই প্রভৃতি নদী। আর মাঝখানে রয়েছে খাল-বিল, বাওর, রাখ ও শাখা নদী বেষ্টিত সমতল ভূমি। এ জেলার অবস্থান গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা অববাহিকার প্রায় মধ্যভাগে। তাই এখানকার ভাষা ও সংস্কৃতি বৈচিত্রময়। একটি জাতির উন্নতির চাবিকাঠি হলো তার ভাষা ও সংস্কৃতি। টাঙ্গাইলের প্রধান ভাষা বাংলা। ব্যবহারের দিক থেকে বাংলা পৃথিবীর সপ্তম ভাষা। এই ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করতে বাঙ্গালীদের রক্ত দিতে রয়েছে। এই রক্ত দেওয়ার ফলে আজ বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষায় স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলা আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা। টাঙ্গাইল জেলার বসবাসকারী আদিবাসীদের মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে গারো সম্প্রদায়ই বেশি। হাজং, মান্দি ও কোচ উপজাতিদের সংখ্যা খুবই কম। গারোদের মাতৃভাষা গারো। আচিক ভাষা হচ্চে গারোদের স্ট্যান্ডার্ড ভাষা। কিন্তু মধুপুর অঞ্চলের গারোরা আচিক ভাষায় কথাবার্তা বলে না। তারা আঞ্চলিক আবেং ভাষায় নিজেদের মাঝে কথাবার্তা বলে। গারো ভাষায় লিখিত কোনো বর্ণমালা নাই। কথিত আছে যে, গারোরা যখন তিববত থেকে এদেশে আগমন করে, তখন যার জিম্মায় গারো ভাষায় পশু চর্মে লিখিত যে সমস্ত বই পুস্তক ছিল, তিনি ক্ষুধার জ্বালায় পথিমধ্যে সমুদয় বই পুস্তক সিদ্ধ করে খেয়ে ফেলেন। বিষয়টি অনেকদিন গোপন থাকার পর যখন জানাজানি হয় তখন আর কারো পক্ষে গারো বর্ণমালা স্মরণ করা সম্ভবপর হয়নি। বর্তমানে গারোরা পারিবারিক মন্ডলে নিজেদের ভাষায় কথা বললেও কর্মক্ষেত্রে তারা বাংলা ভাষাই ব্যবহার করেন। কিন্তু গারোদের ভাষার বৈচিত্র রয়েছে। সাধারণভাবে গারো সম্প্রদায়ের ভাষা আচ্ছিক কুচ্চিক ও মান্দি কুচ্ছিক এ দুই ভাগে বিভক্ত। এরপরও বিভিন্ন গোত্রের পৃথক ভাষায় প্রচলন আছে। উনিশ শতকের সত্তরের দশকে ঢাকায় সিভিল সার্জন মিস্টার জেমস ওয়াইজের লেখা ‘নোটস অন দ্যা রেসেস ফাস্ট এ্যান্ড ট্রেডস অফ ইস্টার্ণ বেঙ্গল’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছে বহু ভাষা একত্রিত হয়ে হয়েছে গারো ভাষা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে ত্রিপুরাদের ভাষায় চাউলকে যেমন মিরং বলে তেমনি গারোরাও চাউলকে মিরং বলে। বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা ছাড়াও টাঙ্গাইলের জনপদে আদিবাসী সম্প্রদায়ের আরো নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। টাঙ্গাইলের কোচ সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষা আছে কিন্তু তাদের ভাষার কোন বর্ণমালা নেই। বিখ্যাত গবেষক হাডসনের মতে কোচদের ভাষাটি বাংলা, উড়িষা, গন্ড, হিন্দি, অহম ও ছোট নাগপুরী ভাষার সংমিশ্রনে সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এ ভাষাটিকে একটি ক্ষণজন্মা ভাষা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আদি কোচদের ভাষার সঙ্গে হাজং ও অহমীদের ভাষার কিছু কিছু মিল খুঁজে পাওয়া গেলেও অনেক ক্ষেত্রে উচ্চারণের বৈপরীত্যও লক্ষ করা যায়। আদিকালে এরা উভয়ই একই। ভৌগলিক এলাকার বাসিন্দা ছিল। যেমন পূর্বে কোচ ও হাজং উভয় সম্প্রদায়ই হাজো নগরের আদি অধিবাসী। কোচদের মাঝে যখন হিন্দুকরণ প্রক্রিয়া ব্রাহ্মণ রাজ্যে প্রবেশ করে, তখনই রাজানুকূল্যে ব্রাহ্মণরা অহমীয়া ভাষায় সংস্কৃতি সাহিত্যের অনুবাদ ও প্রচার করে। এতে অহমীদের ভাষার প্রভাব পড়ে কোচদের কথ্যভাষার উপর। ফলে কোচ ভাষার সঙ্গে অহম ভাষার সংমিশ্রন ঘটে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ও বাংলাভাষী। কিন্তু উচ্চারণ শব্দ অর্থ ইত্যাদি বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দুই দেশের ভাষার কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। দুই অঞ্চলের সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় রীতি নীতির ভিন্নতার কারণে দুই অঞ্চলের ভাষায় মধ্যে এই পার্থক্য। তবুও দুই দেশের বই পুস্তকের ভাষায় অধিকাংশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভিন্নতা প্রকাশ উপভাষা ও আঞ্চলিক ভাষাগুলোতে। টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষা সরলতা পূর্ণ। টাঙ্গাইলের চারপাশের পাঁচটি জেলার অনেক শব্দই টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষা স্থান পেয়েছে। এ কারণে টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষায় নিকট পাঁচটি জেলার অনেক শব্দ ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। টাঙ্গাইলের লোক সাহিত্য, পুঁথি সাহিত্য ও প্রবাদ প্রবচনে ঐ ধারাটি লক্ষ্যনীয়। টাঙ্গাইল সদর থেকে জেলার চার দিকের দশ মাইলের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। নানা রকমের আঞ্চলিক শব্দ এবং উচ্চারণের ভিন্নতা। উত্তর এবং দক্ষিণের উচ্চারণে লক্ষ করা যায় ব্যাপক পার্থক্য। এ জেলার উত্তরাঞ্চলের উচ্চারণের সঙ্গে ময়মনসিংহের টান যেমন লক্ষ করা যায়, তেমনি দক্ষিণাঞ্চলের কিছু অংশ এবং পশ্চিমাঞ্চলে সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলের টান কানে বেজে ওঠে। টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর অঞ্চলে আদিবাসী বসতি রয়েছে। এদের ভাষাও স্বতন্ত্র। যেমন- মিখো চাবো চিখো রিংবো চেং চেং চানাম বে চেং চেং চাওছে ওবাং মাগেন কারি নাম জাওয়া বাংলা-ভাত খাও পানি খাও টক খেয়ো না টক খেলে পেটের ব্যাথা ঘা শুকাবে না। তরুণ গবেষক শফিউদ্দিন তালুকদার তাঁর ভূঞাপুরের জনজীবন ও সংস্কৃতি গ্রন্থে ভূঞাপুরের চরাঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা, ভাষার উচ্চারণ ও শব্দের ব্যবহার সম্পর্কিত একটি চমকপ্রদ মেয়েলী ঝগড়ার অংশবিশেষ উল্লেখ করেছেন। তাহলো- ‘ড্যাহরডা আগে ভালাই আছিলো।’ ব্যাবাক কামেই অতো ছককল ধরে নাই।’ অতো দগল-ফসল কতাও কয় নাই। কতায় কতায় ফলনা-দকনাও দ্যাহায় নাই। পত্তি বিষুদবারে গোদাইর আটে যাওনের সুম হইছ করছে, কি কি হদাই আনোন লাগবো। এ্যাহোন আমার কাছে কিছুই হইছ করে না। আন্দো ঘরের বোগলেই আহে না। ওশোরাত থিকাই দেরিব্যাড়া দিয়া বাইর অইয়্যা আটে যায়। হইছ কোরবো ক্যা? ওই যে হুবুচুনি একটা নিহা কইরা নইছে। এ্যাহন হে যা কয় তাই হুনে। তার হাথে এ্যাকটা ব্যাফাস কতাও কয় না। এই ড্যাহোরের জোনতেই তো মাগির এ্যাতো ডোমফাই।’ এরকম বহু আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ রয়েছে। এ জেলার উত্তরাঞ্চলের, দক্ষিণাঞ্চলের ও পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায়। লেখাটি সংক্ষিপ্ত করণের জন্যই শুধু কিছু শব্দের আঞ্চলিকতার উদাহরণ আলোকপাত করা যাক। পুঁথি রচিয়তা জনাব শাহজাহান মিঞা ‘আগেকার ম্যালা কথা’ পুঁথিতে টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার কিছু চিত্র তুলে এনেছেন। যেমন- ‘বাঙ্গালিদের মূল ভাষার গাইবো যে চরণ বাংলা শব্দ উইঠা অইলো আরেক ধরণ। বাঙ্গালিদের বাঙ্গালিত্ব্যের রাইখো যে স্মরণ লুঙ্গিরে যে তফন কইছি শার্টে রে পেরন। কাঠা রে যে চোবা কইছি বৃষ্টি রে যে দেওয়া নড়ি রে যে পাজুন কইছি সুপারি রে গুয়া। মইয়ের ভিতর খিল লাগাইছি তারে কইছি কোওয়া জামাই মইরা বিধবা অইছে তারে কইছি বেওয়া। ঘরের পিছন কাইনছাল কইছি গরমে রে গুমা আটুর উপর কাপড় পড়ছি তারে কইছি ডুমা। চুনে রে যে দই কইছি লবণেরে নুন জামাই রে যে দামান কইছি ভাল রে যে গুণ। বারিন্দা রে উশরা কইছি মাচিরে উগার ঝগড়া রে যে কয়চান কইছি ধৈর্যেরে সুমার। ঠান্ডারে যে টেলকা কইছি গরমেরে ততা ছিড়া কাপড় দিয়া আমরা বানাইছি যে খেতা। বাতি রে যে হলক কইছি অনেকে রে ম্যালা ছিলিং এ-রে চাং কইছি সূর্য্য রে বেলা। পোলা রে যে গেদা কইছি বাপে রে বাজান মাছ থাকছে মান্দা ভরা গোলা ভরা ধান। আদর রে সোয়াগ কইছি দোষের ছক্কল শীতে রে যে জার কইছি মাতববর রে মোড়ল। তরকারি রে শালুন কইছি রসা রে যে ঝোল সারী সারী নাও ভিরাইছি তারে কইছি কোল।’ অ. গ. ১. অক্কাম = অকাজ ১. গাতা = গর্ত ৪. ঢিলা = আলসে ২. অগোর = ওদের ২. গতর = শরীর ত. ৩. অবা = অমন ৩. গলগলা = ঢিলা ১. তফন = লুঙ্গি ৪. অজ পয়লা = সর্বপ্রথম ৪. গুদা = ছোট ২. ততা = গরম আ. ঘ. ৩. ত্যালং ত্যালং = আহলাদ ১. আছাল = ছিল ১. ঘশি = শুকনো গোবর ৪. ত্যাকত্যাকা = নরম ২. আনাজ = তরকারী ২. ঘাইরা = একগুয়ে ৫. তহিত তালাশ ৩. আংগো = আমাদের ৩. ঘুমা = গরম ৬. তুংগোর = তোমাদের ৪. আহাল = আকাল ৪. ঘুমানী = দেমাক ৭. তেনা = ছিড়া ন্যাকড়া ৫. আড়া = জঙ্গল চ. থ. ৬. আজাইর = অবসর ১. চলা = লাকড়ি ১. থালি = থালা ই. ২. চৈকা = চুলা ২. থ্যাক্কন = হোঁচট ১. ইচা = চিংড়ি ৩. চুককা = টক ৩. থকথকা = ঘন ২. ইস্টি = মেহমান ৪. চেংগি = চাপ ৪. থোয়া = রাখা ৩. ইলশা = ইলিশ ৫. চাং = সিলিং দ. ৪. ইততু কয়ডা = অল্প ৬. চঙ্গ = মই ১. দও = গর্ত ৫. ইটটুকা = অল্প ছ. ২. দিগলা = লম্বা উ. ১. ছেমা = ছায়া ৩. দুক্কু = ব্যাথা ১. উজুরি = ভুড়ি ২. ছেনদি = ছিদ্র ৪. দেওয়া বৃষ্টি ২. উদলা = খোলা ৩. ছেপ = থুথু ৫. দাবার = দৌড় ৩. উম = তাপ ৪. ছিলান = অসতী ৬. দোপা = নিচু ৪. উক্ত = উল্টো জ. ধ. ৫. উলু = উইপোকা ১. জিড়ান = বিশ্রাম ১. ধুমচা = ধনিচা এ. ২. জিয়াফত = দাওয়াত ২. ধূমা = ধোয়া ১. এনে = এখানে ৩. জেন্দা = তাজা ৩. ধাপুর ধুপুর = জোড়ে শব্দ ২. এবাই = এমনি ৪. জাইলা = জেলে ৪. ধুইল্লা = ছোট ৩. এইগুনা = এগুলো ৫. জার = শীত ন. ঐ. ৬. জাইরামকী = দুষ্টামী ১. নাও = নৌকা ১. ঐডা = ওটা ঝ. ২. নুন্দি = ভূড়ি ২. ঐডি = ঐগুলি ১. ঝাক = দলবদ্ধ ৩. নগে = সাথে ও. ২. ঝাইনজর = ছিদ্র পাত্র ৪. নাদা = গোবর ১. ওঠ = ঠোঁট ট. ৫. নেংগুর = লেজ ২. ওশ = শিশির ১. টোপলা = পোটলা ৬. ন্যাবড়া = লালা ৩. ওড়ন = বাঁশের তৈরি চামচ ২. টুপটুপা = রসালো ৭. নাজাই = কম ক. ৩. ট্যাহা = টাকা প. ১. কদু = লাউ ৪. ট্যারা = কানা ১. পছ = জুতা ২. কাইজা = ঝগড়া ৫. ট্যাপা = পেট ফুলা ২. পাগাল = ধার ৩. কটাই = কোথায় ঠ. ৩. পাংখা = পাখা ৪. কাল্লা = মাথা ১. ঠিলা = কলম ৪. পোংড়া জারজ ৫. কামলা = দিন মুজুর ২. ঠ্যাং = পা ৫. পাতুরি = ছিম ৬. কাহিল = দূর্বল ৩. ঠলক = কৌতুক গল্প ৬. পাগলা = পাগল ৭. কাহই = চিরুনী ড. ৭. পিরান = জামা ৮. কইতর = কবুতর ১. ডাংগর = বড় ৮. পোক্ত = শক্ত ৯. কুত্তা = কুকুর ২. ডাইকা = ডেকে ফ. খ. ৩. ডাট = অহংকার ১. ফাটক = ফাঁদ ১. খ্যাতা = কাঁথা ৪. ড্যালা = চোখ ২. ফিড়া = পিড়ি ২. খ্যাড় = খড় ঢ. ৩. ফাতরা = ফাজিল ৩. খেশি = আত্মীয় ১. ঢ্যাপ = শাপলার দানা ৪. ফুচকি = উকি দেওয়া ৪. খেওরি = খেলোয়ার ২. ঢ্যাপ ঢেপা = নরম ৫. ফটফটা = পরিস্কার ৫. খেউড়ি = চুল কাটা ৩. ঢেইক = ঢেকুর ৬. ফতুর = নিঃস্ব ব. ম. স. ১. বান = বর্ষা ১. মতল = জলাভূমি ১. সালুন = তরকারী ২. বিগার = রাগ ২. মাইজাল = মেঝে ২. স্যাই = সেমাই ৩. বিছুন = বীজ ৩. মককর = গো ধরা ৩. সাফ = পরিস্কার ৪. বুজি = বড় বোন ৪. মলন = ধান মাড়ানো ৪. সাপা = এক প্রকার ঘুড়ি ৫. বেমালা = অনেক ৫. মগা = শুকনো হ. ৬. বুদাই = বোকা শ. ১. হবায় = এখন ৭. বাজান = বাবা ১. শিমটাল = স্বার্থপর ২. হস্তা = সস্তা ভ. ২. শাপোট = ঝড় ৩. হাছা = সত্য ১. ভেদর = কাদা ৩. শালা = শেলক ৪. হালি = টাটকা ২. ভোটকা = মোটা ৪. শ্যামা = শ্যামলা ৫. হিয়াল = শিয়াল ৩. ভ্যাবলা = বোকা ৫. শাবুত = নির্দোষ ৬. হাগা = মলত্যাগ ৪. ভেছকি = ধমক ৬. শয় = ঘুমায় ৭. হাস্তর = গল্প টাঙ্গাইল জেলার যেমন আছে প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য, তেমনি আছে লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য। লোক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে টাঙ্গাইল জেলার অবস্থান অনেক উঁচুতে। এ অঞ্চলে প্রচুর লোকসাহিত্য ও লোক সংস্কৃতির উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সংস্কৃতি হলো একটি জাতির ভাব, চিন্তার ফসল, তার ভালো লাগা, মন্দ লাগা, ভৌগলিক ও ঐতিহাসিক পরিবেশও এর সঙ্গে যুক্ত। মানব জীবনের এমন কোন দিক নেই যার সঙ্গে ফোকলোর বা লোক সাহিত্য সংশ্লিষ্ট নয়। নৃ-তত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, ইতিহাস, দর্শন, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ব্যক্তি-পরিবার, সমাজ-রাষ্ট্র প্রশাসন প্রভৃতি ফোকলোর চর্চার অন্তর্ভূক্ত। এক কথায় বলা যায় যে, কোন জাতির স্বরূপ পরিচয় অবহিতির ক্ষেত্রে এবং তদনুযায়ী জাতির সত্তার গঠন-পক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ফোকলোরের বিকল্প নেই। লোক বিজ্ঞানীর ড. আশরাফ সিদ্দিকী সাহেবের মতে ‘‘আমাদের আবহমান সংস্কৃতি তথা ভাষা ও জীবন ধারার উপর হিস্টোরিক ও জিওগ্রাপিক গবেষণা চালালে বহু অতীত- ঐতিহ্যের মটিভ পাওয়া যাবে। আমার এই প্রবন্ধে সেই মোটিভ খোঁজারই একটা প্রয়াস মাত্র। ফোকলোর কার্যত লোক জীবন কেন্দ্রিক তথা প্রয়োগিক ও মানস বৈশিষ্ট্যের তার জীবনাচরণ ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের নানা মাত্রিক অনুশীলনেরই একটি বিশ্ব কেন্দ্রিক পঠন-পাঠনের প্রেক্ষিত। ফোকলোর চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে লোকসমাজ ও লোক জীবনের সঙ্গে আমাদের জ্ঞান জগতের সম্পৃক্ত সাধন করা এবং দেশের বৃহত্তর সংস্কৃতির ঐতিহ্যের সঙ্গে আমাদের জ্ঞান পিপাসু প্রজন্মকে সমন্বি^ত করা সম্ভব। ফোকলোর ইংরেজি শব্দ। আমাদের দেশের পন্ডিত গবেষকগণ ফোকলোরের বিভিন্ন নামের উল্লেখ করে থাকে। এক্ষেত্রে এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে যে অভিধানগুলো সবিশেষ পরিচিতি পেয়েছ সেগুলো হচ্ছে লোক-শিক্ষা, লোক-জ্ঞান, লোক-তত্ত্ব ইত্যাদি। তবে আমার মতে লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতি অভিধানটি অধিক পরিচিত এবং সঠিক। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর কিংবা অল্প শিক্ষিত। তাদের জীবনের সঙ্গে আস্টে-পৃষ্টে জড়িত যে সংস্কৃতি তাকেই আমরা লোক সংস্কৃতি বলে মনে করি। যে সংস্কৃতির সৃষ্টি, বিকাশ ও প্রবহমানতা কোন পন্ডিত গবেষণা আলোচনা কিংবা কতিপয় উচ্চ শিক্ষিত নগরবাসী বুদ্ধিজীবির চর্চার মুখাপেক্ষী নয়। মোট কথা লোক সাহিত্য বা লোক ঐতিহ্য চির সচল, এটি মৃত ফসল নয়। পাশ্চাত্য পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ লোক বিজ্ঞানী ডক্টর রিচার্ড এম ডরসন তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে বারবার লিখেছেন ‘লোক-ঐতিহ্য সংগ্রহ একটি আনন্দজনক অভিজ্ঞতা-এর মধ্যে দিয়ে আমি দেশের লোকমানুষের সঙ্গে পরিচিত হই তাদের ঘৃণা ও বিদ্বেষের ব্যারোমিটার কখন কীভাবে উঠানামা করেছে তা আমি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে জানতে পারি, আমি বৃহত্তর দেশকে জানি’। আমাদের টাঙ্গাইল তথা সোনার বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস লিখতে হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিরাট বিপুল লোক ঐতিহ্য ও লোক সাহিত্যকে তার উৎসকে আজ নতুন মূল্যবোধ নিয়ে ভাবতে হবে, জানতে হবে। এ জানার অর্থ আমাকেই জানা এবং পরিপূর্ণভাবে জানা। পলাশীর বিপর্যয়, সিপাহী বিপ্লব, ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যা ফরায়েজি আন্দোলন, ওয়াহাবি বিদ্রোহ, নীলবিদ্রোহ, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, স্বদেশী আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, স্বরাজ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বহু ছড়া, গান ও গল্প মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল। এগুলোই ছিল জনগণের মনের আসল ব্যারোমিটার। টাঙ্গাইলের লোকসাহিত্যের ভান্ডার বিশাল। এর নিজস্ব স্বত্ত্বাও রয়েছে। প্রাচীন কালে টাঙ্গাইল অঞ্চল আসামের অন্তর্গত কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিলো। আর কামরূপ রাজ্য ছিলো তান্ত্রিক সাধনার এক তীর্থ কেন্দ্র। এ কারণেই এ রাজ্যের রাজেন্দ্রবর্গ দ্বারা সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। বাংলা লোকসাহিত্যের অমর সম্পদ বাবু দীনেশ চন্দ্র সেন সংগৃহিত ময়মনসিংহ গীতিকার পটভূমির এক বড় অংশ জুড়ে রয়েছে টাঙ্গাইল জেলা। আর দক্ষিণারঞ্জন মিত্রের ঠাকুরমার ঝুলির অনেক রশদ সংগ্রহ হয়েছে টাঙ্গাইল থেকে।এই জনপদের লোকসাহিত্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পল্লীগীতি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদী, মারফতি, বিচার, ধুয়া, জারি, সারি, রাখালী, বারোমাসী, মালসী, মেয়েলীগীতি, বিয়েরগান, সঙ, ঘাটুগান, কবিগান, বাউলগান, লোকগাঁথা, পালাগান, ছবকিগান, চটকাগান, পুঁথিপাঠ, মন্তরপাঠ ইত্যাদি। টাঙ্গাইল জেলার এসব লোকসাহিত্যে একদা স্থান করে নিয়ে ছিলো- প্রেম, বিরহ, বিচ্ছেদ, ধর্ম, ইতিহাস, ঐতিহ্য। আর টাঙ্গাইল জেলার লোক কবিদের দ্বারা বিভিন্ন সময় রচিত হয়েছে লোকজ ছড়া, ধাঁধা, প্রবাদ প্রবচন।লোকনাট্যের মধ্যে আছে সঙযাত্রা, বেহুলারগান বা ভাসান যাত্রা ও ঘাটুগান। সঙযাত্রা হলো টাঙ্গাইলের নিজস্ব ঐতিহ্য। এই লোকনাট্যের সাথে রংপুর অঞ্চলের লেটুযাত্রার সঙ্গে কিছু মিল দেখা গেলেও উপস্থাপন আঙ্গিকে ভিন্নতা রয়েছে। সঙযাত্রার সঠিক কোন সংজ্ঞা পাওয়া যায় না। তবে নাট্যের মতো অন্যের কর্ম ও আচরণে অসঙ্গতি প্রদর্শনের জন্য ব্যঙ্গ বিদ্রুপকারী অভিনেতাকে সঙ বলা হয়। আর অন্যভাবে বলা যায় নাটকের মত করে উপস্থাপন করার নামই হচ্ছে সঙযাত্রা। টাঙ্গাইলের সঙযাত্রার কিংবদন্তির নটরাজের নাম সাজগীরি। তিনি বৃটিশ আমলে সঙযাত্রার অভিনয় করে ভারতবর্ষ মাতিয়ে ছিলেন। টাঙ্গাইলের বড় বাশালিয়া, ফলদা, বেতডুবা, নারান্দিয়া, গোবিন্দাসী প্রভৃতি গ্রামে সঙযাত্রার দল আছে। বিশেষ করে ফলদা, বড় বাশালিয়া ও বেতডুবার দল দেশের বিভিন্ন জেলায় ও বিভিন্ন টিভি মিডিয়াতে সঙ খেলে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। একদা টাঙ্গাইল অঞ্চল ঘাটু আর ভাসানের গানে প্রায় ভেসে গিয়েছিল। মোট কথা রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলা বিষয়ক কতো গীতিকা যে সে সময়ে তৈরি হয়েছিল তার লেখাজোকা নেই। ঘাটুও ঠিক এমনি প্রেমের ব্যাপার নিয়েই রচিত গীত। ঘাটে ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে এই গান গাওয়া হতো বলে নাকি একে বলা হতো ঘাটুগান। এ কথার মধ্যে অবশ্য কোন যুক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ঘাটুগানের মূল গায়ক একজন লম্বা চুলধারী বালক, সে নিজেই গান নৃত্যে অংশগ্রহণ করে। অনেকগুলো নৌকা একস্থানে একত্রিত করে জোস্না বিধোত হাওরে নদীতে বা ঘাটে চলতো ঘাটুগান প্রায় সমস্ত রাত। গানের বিরহ বিধূর সুর সঙ্গে সঙ্গে করুণ নৃত্য নির্জন হাওর বা ঘাটের প্রান্তর সুরায়িত করে তুলতো। ঘাটুগান বিচ্ছেদের গান। বিরহের গান। এ গানের মাঝে মধ্যে অশ্লীলতার যোগ ঘটে বিশেষ করে কথায়, কখনো বা স্থূল রসিকতা ধরে ধরে এগিয়ে চলে বিষয়গুলো। আবার কখনো পাল্লা হয় দু’দলের মধ্যে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়- বন্ধু আমার বাড়ি গেলে প্রেমের বাকসো দেব খুলে গোলাপ জলে স্নান করাব আতর দেব ঢেলে প্রেমের বাকসো দেব খুলে বন্ধু আমার বাড়ি গেলে প্রেমের বাকসো দেব খুলে ঘাটুগানের পরেই যে গানের কথা উল্লেখ করা যায় তাহলো জারিগান। জারিগানের মূল উৎস খুঁজতে হবে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাবলী বিষয়ক নানা কাহিনীতে। মোট কথা এই কারবালা কাহিনীর বীরত্বগাঁথা এবং শোক থেকেই শুরু হয়েছিল মর্সিয়া জারির। মূল গায়েন পাগড়ী বেঁধে আসরের মধ্যস্থলে অবস্থান করে, সেই হলো মূল বয়াতী, তাকে ঘিরে বসে আরো দশ বারোজন এরা হলো দোহার। আসরের মাঝখানে মূল বয়াতী নেচে নেচে এ গান পরিবেশন করে থাকে, সাথে সাথে দোহারগণ ধুয়া ধরে থাকে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ্য মূল গায়কঃ প্রথমে বন্দনা করি আল্লাহ নবীর নাম দ্বিতীয় বন্দনায় জানাই গুরুদেব ছালাম তৃতীয় বন্দনা করি মাতা ও পিতার চতুর্থ বন্দনা করি শ্রোতা ভাই সবাই। দোহারঃ এসো সবাই মিলে মোরা দেশের জারি গাই টাঙ্গাইলের জারিগানের পরেই আসে ধুয়াগানের প্রসঙ্গ। দিগন্ত বিস্তৃত ধান-পাটের ক্ষেতের নানা প্রান্ত থেকে আজো শোনা যায় চাষীর উদাত্ত কণ্ঠের ধুয়াগান। টাঙ্গাইল অঞ্চলে একদা পাটের আবাদ হতো প্রচুর। বিশেষ করে পাট ক্ষেত নিড়ানোর সময়েই এইগানটি বেশী গাওয়া হয়। এখানে প্রেম বৈচিত্রসহ নানা রকম আধ্যাত্মিক বিষয় এবং স্থূল বিষয়ও অবলম্বন করা যায়। ধুয়াগানের আবার পাল্লাও হয়; একই চকে দু’দল চাষীর মধ্যে এই পাল্লা চলতে থাকে। এরপর আসা যাক নৌকা বাইচের কথায়। নৌকা বাইচের ক্ষেত্রেও মূল গায়েন নৌকার মাঝখানে অবস্থান করে নেচে নেচে গান গেয়ে বাইচাদেরকে উৎসাহ প্রদান করে। এ ক্ষেত্রে বাইচের নৌকার সকল বাইচা দোহারদের ভূমিকা পালন করে থাকে। নৌকা বাইচের গানকে সারিগান বলে। সারিগান মূলত কর্ম সঙ্গীত, সারিগানের বিষয়বস্ত্ত প্রায় ক্ষেত্রেই প্রেম বিষয়ক, বিশেষ করে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম, তবে কর্ম বিষয়ক নানা দিক এতে বেশি পরিবেশিত হতে দেখা যায়। যেমন- বৈঠা টান দিও রে কানা কুরকার ছাও ফলদার বাইচাল আমরা ধুবলিয়ার নাও বৈঠা টান দিও রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে টাঙ্গাইলের মেয়েলীগীতি। শুধু টাঙ্গাইল কেন সারা বাংলা অঞ্চল জুড়ে এই মেয়েলী গানের বিস্তার। বাংলার নায়িকার বারমাসী তো বাংলার এক অমূল্য সম্পদ। এ ছাড়া বিয়ের গান হলো মেয়েলী গানের আরো এক সমৃদ্ধ দিক। বিয়ের আসরে এককালে মেয়েদের সমবেত গীত পরিবেশিত না হলে বিয়ের আসরটাই যেন কেমন ম্লান হয়ে যেতো। মেয়েলী গানেই সব চাইতে বেশি বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়। জীবনযাপনের নানা বেদনা, শ্বাশত বাংলার নারী হৃদয়ের কামনা-বাসনা, সুপ্ত বাসনা ও সুপ্ত ব্যাথার ইঙ্গিত বহন করে চলেছে এই মেয়েলী গীতগুলো। যেমন- মেন্দিরি গাছটি চিরল চিরল পাতাডি সোনার মেন্দি যাবো রে নশা মিয়ার গায় সোনার মেন্দি যাবো রে নশা মিয়ার গায়। আরেকটি সমৃদ্ধ ক্ষেত্র হচ্ছে ছড়া ও শ্লোকের ক্ষেত্র। এখনও বাংলার তথা টাঙ্গাইল অঞ্চলের মানুষেরা কথায় কথায় ছড়া কাটে, শিশুকে ঘুম পাড়ানোর জন্য সে ছড়া ব্যবহার করে, খেলাধুলার ছড়া, কোথায় এই ছড়ার ব্যবহার নেই। ছড়ার উৎস খুঁজতে হলে মাতা ও শিশুর সম্পর্কের দিকে তাকাতে হয়। ঘুম পাড়ানী গান গাইতে গিয়েই শিশুকে ভোলানোর জন্য তৈরি হয়েছিল প্রাথমিক পর্বের ছড়া। ছড়াতেই সবচেয়ে বেশি বিধূত হয়েছে জনজীবনের নানা দিক। এখনো মানুষ সাধারণ কোন ঘটনা কিংবা চমকপ্রদ কোন বিষয়কে অবলম্বন করে মুখে মুখেই তৈরি করে ফেলে নানা মুখরোচক ছড়া। সে সব ছড়াগুলো শেষাবধি মানুষের মুখে মুখে ফেরে। বিশেষ মজার কোন বিষয় এতে সংযুক্ত হলে শেষ পর্যন্ত গ্রাম-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। উদাহরণ- গাঙ্গের পাড়ে উস্তা গাছ উস্তা তুলবার গেছিলাম উস্তা নিল পুলিশে নাফদা উঠলাম ডুলিতে। ছড়ারই সমগোত্রীয় হচ্ছে শোলক। টাঙ্গাইল অঞ্চলে বলা হয় হলক। এই শোলকও ছড়ার মতোই মানুষের মুখে মুখে ফেরে। প্রায় ক্ষেত্রেই এই হলক দ্বারা প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা হয়। শ্লেষ ও ব্যঙ্গ বিদ্রুপ ভরা থাকে এই হলক। এই শোলক আসলে শোলকের নামান্তর। এই শোলকের আবার ছড়া আকারেরও হয়। গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত যে হলক তাতে আঙ্গিকগত দিক থেকে শোলকের কোন সম্পর্ক নেই, তবুও কেন জানি শ্লেষ বিদ্রুপ ভরা এই প্রবাদ প্রতিম বিষয়টিকে শোলকের কাছাকাছি হলক নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।প্রবাদ প্রবচন তো বাংলার আরেক সম্পদ। মানুষের নানাবিধ ঘাত-প্রতিঘাত, জীবনযাপনের নানা সমস্যাবলীর খবর খুঁজে পাওয়া যায় এই প্রবাদ প্রবচনগুলোতে। কতো কাল থেকে এই প্রবাদগুলো মানুষের বাস্তব জীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছে তার কোন হিসেব নেই। টাঙ্গাইলের আরেকটি সবচেয়ে উজ্জ্বল জগৎ হচ্ছে ধাঁধার জগৎ। ধাঁধা যেন প্রাচীন বাংলার আইকিউ পরীক্ষার জগৎ। কোথায় ধাঁধার ব্যবহার ছিল না সেকালে। ছেলে বুড়া আবাল বৃদ্ধ বণিতা প্রত্যেককেই ধাঁধার মুখোমুখি হতে হতো। মাঠের রাখাল হতে শুরু করে নতুন জামাইকে পর্যন্ত এই ধাঁধার কারণে নাস্তানাবুদ হতে দেখা গেছে। কে কতো বুদ্ধি রাখে কিংবা কতোটা চালাক এসব বিষয়ের পরীক্ষা নিতে ধাঁধার কোন বিকল্প ছিল না। আজো বাংলার নানা অঞ্চলে এই ধাঁধাগুলো এদের পুরনো আবহ নিয়ে সচল আছে। কিন্তু এসব ধাঁধা সংগ্রহের ব্যাপারে বড়ো কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ধাঁধাতে শুধু হেয়ালীই নেই, ধাঁধার মধ্যেও বিধৃত হয়েছে গ্রাম বাংলার নানা বিষয়। জীবনযাপনের নানা প্রক্রিয়া এবং মানুষের নানা কর্ম প্রবাহের ছবিও এতে বিধৃত। মানুষের দেখার জগতের বাইরেও থেকে যায় অনেক কিছু কিংবা ভালো করে দেখেও এর সঠিক বিষয়টি উদঘাটিত হয় না। মোট কথা দেখা জিনিসের মধ্যে একটু হেয়ালীর কুয়াশা ফেলে দিলেই দেখে জগত কেমন যেন অচেনা হয়ে যায়। ফেলে দেয় মানুষকে কিছুক্ষণ ধাঁধার মধ্যে। সেইতো ধাঁধা, কিছুকালের জন্য মানুষকে বোকা বানানো। এটাই ধাঁধার মূল আনন্দ। একজন চালাক মানুষকে হঠাৎ করে বোকা বানিয়ে দেখার মধ্যে ধাঁধার মূল আনন্দটি বিদ্যমান। কোন সমাবেশ কিংবা মজলিসে একদা ধাঁধার প্রতিযোগিতা হতো পুরোদমে। কে কাকে হারাতে পারে এই নিয়ে হতো তুমুল প্রতিযোগিতা। ধাঁধার এই আসরগুলো আলাদা কোন আসর ছিল না। দেখা গেছে বিবাহ আসরে একটি দুটি ধাঁধা প্রয়োজন বলতে গিয়ে পুরো আসরটাই শেষে ধাঁধার আসরে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। আজও ধাঁধাগুলো তাদের স্বকীয় মহিমায় উজ্জ্বল। এসব ধাঁধা সংগ্রহের ব্যাপারে আমাদের লোক সাহিত্য সংগ্রাহকদের আরো এগিয়ে আসতে হবে। যেমন- উপরে মাটি তলে মাটি মাঝে একটি সুন্দর বেটি। উত্তরঃ হলুদ। কিংবা শিশুকালে ঘোমটা বড় হইলে নেংটা। উত্তরঃ বাঁশ। লোকসাহিত্যের আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে মেয়েলী গীতগুলো, যে কথা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। মেয়েলী গীতের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক হচ্ছে এর বারমাসীগুলো। আবহমান বাংলার গৃহস্থ ঘরের নারীকূলের সমস্ত জীবনের গাঁথা যেন এগুলো। সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই রীতিমতো অবহেলিত আমাদের নারী সমাজ।পিতৃগৃহে অনাদরে অবহেলায় কাটে কোন কোন কন্যার জীবন। ছেলে সন্তানের প্রতি যেরূপ মায়া-মমতা বিরাজমান থাকে সংসারে মেয়েদের প্রতি ততোটা নয়। ভাবটা এমন যে, কন্যা তো বড়ো হলে চলে যাবে পরের ঘরে, পর হয়ে যাবে একদিন আর পুত্র সন্তান তাদের বংশ রক্ষা করবে। এ রকম একটা ভুল ধারণা নিয়ে বাস করছে বাঙালী সমাজ নেই আবহমানকাল থেকে, এ কারণে কন্যা বরাবরই থেকে গেছে অবহেলিত। পিতৃগৃহ থেকে স্বামী গৃহে গিয়েও তার কোন শান্তি নেই। সেখানে আছে যমের মতো শ্বাশুড়ী আর দূরন্ত ডাকিনী ননদকূল। প্রতিনিয়ত সংসারের নানা প্রতিকূল পরিবেশে এই নারীকূল হয়েছে বারবার নিগৃহীত। এই গোপন বেদনা সে লালন করে সারাটি জীবন। পুরুষ সাধারণতঃ বহির্মুখী, যদিও ঘরকুনো বাঙালী বলে একটি দুর্নাম আছে তাদের। তবুও এরা ঘর থেকে বার হয় জীবিকার প্রয়োজনে। ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা কর্মের সন্ধানে পার হয় নিজের আঙিনা। ঘরে রেখে যায় গৃহবধু অবলা নারী। যে নাকি সংসারে অনাদরে অপাক্তেয় হয়ে পড়ে থাকে। শুরু হয় তার প্রতীক্ষার পালা। বৎসর মাস পার হয়, দিন গুণতে থাকে স্বামীর প্রতিক্ষায়, করে ঘরে ফিরবে তাঁর মমতার নিধি। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই ঘরে আর ফেরা হয়ে উঠে না, আমাদের গীতিকাগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় বারবার সে ট্রাজিক পরিণতি। ভিন দেশে ভিন গাঁয়ের এক কন্যার প্রেমে মজে সেইখানেই ঘর বেঁধেছে তার ঘরের মানুষ। তবুও আশায় বুক বেঁধে থাকে নারী, কবে তাঁর সাধুর চরণধূলি পড়বে তাঁর আঙিনায়।বারমাসী গানগুলো এমনি সব বেদনা বিধুর কাহিনীতে ভরা। অশ্রু জলের ঝরণা ধারা যেন আমাদের বাঙলার এই বারমাসীগুলো। বারমাসী প্রতীক্ষার প্রহরগুলো বর্ণনা প্রসঙ্গে এসেছে বাংলার ছয়টি ঋতুর নানা বৈচিত্র্যের কত না রূপরেখা। যেগুলো আজও খুবই উঁচুমানের শিল্প হয়ে বেঁধে আছে আমাদের মেয়েলী গীতে। বাংলার লোক-সাহিত্যের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সম্পদ হচ্ছে এর রূপ কথাগুলো। টাঙ্গাইল অঞ্চলে যা শাস্তর নামে পরিচিতি। লোক-কাহিনীগুলোর উৎস খুঁজতে গিয়েও আমাদের হাজির হতে হয় সেই আদিমকালে। যেখানে বর্ষিয়ান কোন মানুষ তাঁর আশেপাশের মানুষজনকে শোনাচ্ছে নানা অলৌকিক কাহিনী। এই অলৌকিক কাহিনী ক্রমে আকাশের দেবকূল ও অলৌকিক জীব থেকে নেমে এসেছে মর্ত্যের মাটিতে। মর্ত্যের মানব-মানবী এসে যেদিন থেকে যোগ হলো কাহিনীগুলো সেদিন হতেই এই লোক-কাহিনীগুলো তার আসল রপ পরিগ্রহ করলো। প্রথমে রাজ-রাজড়াকে কেন্দ্র করে এসব রচিত হলেও পরবর্তীতে নেমে এসেছে সাধারণ মানুষের আঙিনায়। অলৌকিক বীর অন্তর্হিত হয়ে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ ক্রমেই ঠাঁই করে নিয়েছে গল্প কাহিনীগুলোতে। তবুও কাহিনীগুলো অন্য একটি পুরানো দিক সর্বদা সংরক্ষণ করে এসেছে এর ধারাবাহিকতায়। বিশেষ করে রাক্ষস-খোক্কস কিংবা অলৌকিক কোন জীবন কাহিনী যা আজো আমাদের কালে শিশুতোষ কাহিনী হয়ে বেঁচে আছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ, আবার এর প্রতিপক্ষ দৈত্য-দানব কিংবা অলৌকিক কোন জীবজন্তু। মোট কথা কাহিনীগুলো আবহমান কাল ধরে বাংলার আবালবৃদ্ধ বণিতার মনের খোরাক জুগিয়ে এসেছে সর্বদা। আজও বাংলার গৃহস্থের আঙিনায় জোসনা রাতে আসর বসে রূপকথার। আজো গ্রাম বাংলার দাদী-নানীরা তাদের নাতি-নাতনীদের শোনায় সেই শত বর্ষের পুরোনো রূপকথা। যা বাংলার শর্ত বর্ষের ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে অনাদিকাল থেকে। টাঙ্গাইল জেলায় বসবাস করা মানুষের মধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষদেরকে বলা হয় গারো। গারো সম্প্রদায়কে আবার আরো কয়েকটি দলে বা শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। সেই দল বা শ্রেণীভূক্ত লোকদের নাম হলো- আওরে, আবেং, আওং, রূগা, চিবক, চিসক, দোয়াল, মাচ্চি, কচ্চু, আতিয়াগ্রা, মাৎ জাংচি, গারা গানচিং, মেগাম ইত্যাদি। উপরোক্ত সম্প্রদায়গুলো ছাড়াও গারোদের বসতিগতভাবে আরো তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। সে ভাগ তিনটি হলো- (১) আচিক (পাহাড়ী) (২) লামদানী (সমতলবাসী) এবং (৩) আরাবী গারো। গারো সম্প্রদায়ের লোকেরাও গান বাজনা করে। ধর্ম পালন করে। প্রেম ভালোবাসা করে। ধর্মানুসারে বিয়ে সাদি করে। সাধারণ মানুষের মতো সুখে, দুখে, আনন্দে জীবন যাপন করে। আনন্দ করার জন্য তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মদ পান করে। শুয়োর ও মুরগী জবাই করে খায়। আর আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী দাওয়াত করে নাচ গানের আয়োজন করে। নাচ গান করার সময় গারোরা বাদ্য যন্ত্র হিসেবে বিভিন্ন রকম যন্ত্রও ব্যবহার করে। গারোদের গান বাজনায় ব্যবহৃত বাদ্য যন্ত্রগুলো হলো- কাআল, দুমচাং, গঙ্গেন্দা, রাং, আদুরু, বাংশি, দামা, নাগ্রা, খ্রাম, দামাদামিক, ছেংছা, দিদাং, গংগিনা প্রমুখ।উল্লেখিত বাদ্যযন্ত্রগুলো বাজিয়ে তারা নাচ গান করে। এই নাচগানে আবাল বৃদ্ধ বণিতা সবাই কম বেশি অংশ গ্রহণ করে। তবে বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই যে সকল গারো মেয়ে-পুরুষের কন্ঠস্বর ভালো তারাই শুধু নাচ গান করে থাকে। গারোদের গাওয়া গানের কথা এরকম- (১) নকমা ওয়ান গালা নায়া রিবামিং মেরুক হানালা মাশ না বা মিং। (২) ধকা মাংগং বলাকু ধক নুয়ার রায়া পাইমা পাড়াকু রানুয়ার দংয়া দংয়া গারো সম্প্রদায়ের লোকেরা বিয়ে উপলক্ষ্যেও অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কোন এক শুভ দিন দেখে গ্রামের পুরোহিতকে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য নিমন্ত্রণ করে। অন্যান্য আত্মীয় স্বজনরাও নিমন্ত্রণ পেয়ে আসে। বিয়ে বাড়িটি উৎসবে মুখরিত হয় তারপর পুরোহিত বিয়ের কাজ শুরু করার জন্য বর-কণেকে কাছে ডেকে আনে। অতপর ‘দো-দকআ’ আদি ধর্ম প্রথা অনুসারে পুরোহিত বিয়ে পড়নোর জন্য একটি মোরগ বাম হাত দিয়ে ধরে এবং ডান হাতে প্রথমে কণের পিঠে মৃদু করে চাপড় মারে। আবার আরেকটি মোরগ দরে। তারপর বরের পিঠে মৃদু করে চাপড় মারে। এই মোরগ ধরে চাপড় মারার সময় পুরোহিত দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে মন্ত্র পাঠ করে। মোরগের মাথাও মন্ত্র পাঠ করার সময় ছিড়ে ফেলা হয়। মোরগ দুটির রান্না করা মাংস বর-কণের খাওয়া নিষেধ। তবে পাড়া প্রতিবেশী অন্যান্য আত্মীয় স্বজনরা খেতে পারে। বর-কণের খাওয়ার জন্য অন্য মোরগের ব্যবস্থা করা হয়।গারোদের এইরূপ বিয়ের অনুষ্ঠানকে গ্রাম্য ভাষায় মুরগী মিলন বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই মুরগী মিলনে বা ‘দো-দকআ’ বিয়ের অনুষ্ঠানে পুরোহিতদের পাঠ করা মন্ত্রের ভাষা এরূপ- ‘‘ও ধূয়া দুদুরা মংদী আমারে দামিও মানরাআ দায়া মানাদে মু দায়া জাদেমু নাংমো মানা সা নাংমো নিকুলা ডুবু দক্কুইয়া হই। মংদী আমেরা দুবক দগকুংমা ওয়াফু আন নিংয়া ইয়া মাই।’’ গারোদের বিয়ের উৎসবকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথমত দিনের বেলায় মন্ত্র পাঠ করে বিয়ে পড়ানো হয়। দ্বিতীয়ত রাতের বেলায় সকল আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়ে আরম্ভ হয় ভোজন পর্ব। গারোদের ভোজন পর্বে প্রচুর পরিমাণ মদ ও মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। ভোজন পর্ব শেষ হলে বর-কণেকে এক ঘরে শোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তারপর শুরু হয় বিয়ের গান। গারোদের কয়েকটি বিয়ের গান উদাহরণ স্বরূপ তুলে ধরা হলো- (১) আমা আপ্পা দংজাক সাচা মিফাল চানাজক সাদিমাজং দংওবা আমা গিদাং হংজাজফ নাংগুরি কিচিরং নাংগুরি দিচেরং (২) গং গং বেটা আটিসা রিনামা গাড়ী ধরামিন্নি অলনামা ওহ দংয়া ওহ দংয়া উপরোক্তভাবে বিবাহ প্রথা গারো সমাজের মধ্যে আবহমান কাল ধরে চালু হয়ে আসছে। গারোদের মধ্যে একই গোত্রে বিবাহের রীতি নাই। বিয়ের পর সব ছেলেই মেয়ের বাড়িতে বসবাস করতে আসে। গারো সম্প্রদায়ের মেয়েরাই সংসারের প্রধান এবং সকল ধন-সম্পত্তির মালিক হয়। এই প্রথা এখনো গারো সম্প্রদায়ের মধ্যে চালু আছে। গারো সাংস্কৃতির উল্লেখ্যযোগ্য দিকগুলো সামাজিক ও ধর্মীয় ছাড়াও বিভিন্ন নৃত্য-গীতের আয়োজন এবং পূজার অনুষ্ঠান পালন করা। তবে বেশিরভাগ গারো এখন খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করায় তাদের মূল অনুষ্ঠান লুপ্ত হতে চলেছে। নাচ গানের অনেক কথাই লুপ্ত প্রায়। কতিপয় সংখ্যক গারোরাই নাচ গানের আসর করে। বাকীরা নাচ, গান, বাজনা থেকে দূরে থাকে। তারা আদি ধর্মীয় ও সামাজিক গান বাজনা বাদ রেখে আধুনিক যুগের গানের দিক ঝুকে পড়েছে।কোন দিন ম্লান হবে না আমাদের এই লোক-ঐতিহ্য, যতোই আধুনিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির পলি জমা হোক এসবের উপর। আধুনিক নানা বিনোদনের চাপে ক্রমেই যদিও তা বিলুপ্তির অন্ধকারে বিলীয়মান তবুও আজো এর রূপ বৈচিত্র্য দোলা দেয় আমাদের মনে। আজও বাংলার মানুষ এসব গল্প-কাহিনী, গীতিকা, ছড়া, ধাঁধা, প্রবাদ প্রবচন কথায় কথায় ব্যবহার করে। অনন্তকাল ধরে এই কাহিনীগুলো হয়তো তাদের শাখা প্রশাখা বিস্তার করে যাবে লোক চক্ষুর অগোচরে। নাট্যচর্চা ও নাট্যাঙ্গন টাঙ্গাইলের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নাট্যচর্চা ও নাট্যাঙ্গনের অবদান উল্লেখ্যযোগ্য। এ প্রসঙ্গে করোনেশন ড্রামাট্রিক ক্লাবের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। ১৯১১ সালে টাঙ্গাইলের করোনেশন ড্রামাট্রিক ক্লাব(সিডিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটেনের রাজা পঞ্চম জর্জের অভিষেক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভূক্ত দেশগুলিতে তখন উদাপিত হয় ‘করোনেশন’ উৎসব। এই পটভূমিতেই হয়তো ক্লাবের নাম করা হয় করোনেশন ড্রামাট্রিক ক্লাব। এই ক্লাব স্থাপনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন সে কালের প্রখ্যাত সমাজসেবী ও প্রথিতযশা আইনজীবী অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ। ১৯১০ সালে টাঙ্গাইলে একটি কৃষি, শিল্প ও সাংস্কৃতিক মেলার আয়োজন করা হয়। সেই মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল নাট্যানুষ্ঠান। প্রতি রাতে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সৌখিন নাট্যদশ সে সময় নাটক মঞ্চস্থ করে দর্শক হৃদয় জয় করে। নাটকের সেই অভাবনীয় জনপ্রিয়তা দেখে সম্ভবত অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ এবং আরো কয়েকজন নাট্যরসিক গুণীজন মিলে আকুর টাকুর পাড়ায় পুরাতন লাশ কাটা ঘরের পিছন দিকে জনৈক ব্রাহ্মনের বসতবাবাড়ী আঙিনায় করোনেশন ড্রামাট্রিক ক্লাব গঠনের মাধ্যমে নাটমের মহড়া শুরু করে এবং লাশকাটা ঘরের কাছাকাছি যদুনাথ ভট্রাচার্যের ইজারাকৃত জমির উপর নাট্যমঞ্চ ও মিলনায়তন নির্মাণ করেন। ক্লাবের উদ্যোক্তরা প্রতিষ্ঠানের সমসাময়িক সময়েই নতুন জেগে উঠা চরে ভূমিকে সংস্কার করে এবং বিভিন্ন বৃক্ষ রোপন করে প্রায় একবর্গ মাইলের পার্ক প্রতিষ্ঠা করে করোনেশন পার্ক নামে। নব সৃষ্টির ধারায় সঞ্জীবিত হয়ে করোনেশন ড্রামাট্রিক ক্লাব নিরবচ্ছিন্ন নাট্যচর্চা ও নাট্যাভিনয়ের জগতে অন্যন্য প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি করোনেশন ড্রামাট্রিক ক্বাব শিক্ষা সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি, নৃত্যগীত, নৃত্যনাট্য, চিত্রকলা, চারুকলার প্রতিটি শাখা-প্রশাখার ব্যপ্তি ও বিকাশে অবদান রাখছে। উল্লেখ্য, ১৯১১-২৫ সালের মধ্যে এ ক্লাব প্রযোজিত নাটকের সংখ্যা কমবেশি ৩০টি। পরবর্তীতে শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হিসাবে খ্যাত সন্তোষের ছয়আনি তরফের জমিদার হেমেন্দ্র নাথ রায় চৌধুরীর দান করা বর্তমান জায়গায় ১৯৪৪ সালে ক্লাব নিরালার মোড়ে স্থানান্তরিত হয়। সাংস্কৃতিক-পেশাগত সংগঠন সাহিত্যসংসদঃ ১৯৬০ সালের শেষের দিকে এই সাহিত্য সংসদের যাত্রা। এই সংগঠন অনেক কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ১৯৬৩ সালে এই সংসদ আয়োজন করে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্ত্রী। আধুনিক কবিসংঘঃ ১৯৫৮ সালে টাঙ্গাইলের কয়েকজন সংস্কৃতিক কমী বুলবুল খান মাহবুব, রফিক আজাদ, মীর আবুল খায়ের, আবু কায়সার, কৃষ্ণানন্দন সাহা ও মওদুদ খান মজুন গঠন করেন আধুনিক কবিসংঘ। এই সংঘের আয়োজনে কলিকাতা থেকে আগত তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়, প্রবোধ কুমার সান্যাল ও রাধারানী দেবীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। অরণিঃ ১৯৭২ সালে টাঙ্গাইল শহরে এই সংগঠন আত্ম প্রকাশ করে। ১৯৭৫ এ সাহিত্য সম্মেলন, ১৯৭৬-এ জাতীয় কবি সম্মেলন, ১৯৭৮-এ দু‘দিনব্যাপী সাহিত্য সম্মেলন এবং প্রতি বছর রবীন্দ্র-নজরুল জন্ম জয়ন্ত্রী আয়োজন করে। এই প্রতিষ্ঠান ১৯৮০ সালের ৮ জুন টাঙ্গাইল তথা বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ টাকা দর্শনীর বিনিময়ে কবিতা পাঠের আয়োজন করে। স্বকাল পরিষদঃ ১৯৮২ সালের ২ ফেব্রুয়ারী এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। নানা ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এই প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে। টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদঃ প্রতিষ্ঠা ২২ এপ্রিল ২০০৪। এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে মাসে দু‘বার নিয়মিত কবিতা পাঠের আয়োজন করে। টাঙ্গাইল জেলা শিল্পকলা একাডেমী, জেলা সদরে অবস্থিত। শিল্পকলা একাডেমীর বিশাল ও আধুনিক হলরুম টাঙ্গাইলের শিল্প প্রদর্শনীর মূল কেন্দ্র। টাঙ্গাইল জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯৮ সালে টাঙ্গাইল ক্লাবের পিছনে। যা নারীদের ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে। টাঙ্গাইল জেলা এডভোকেট বার সমিতিঃ প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৬৯ সালে জেলা সদরে। এটি একটি আইনজীবীদের স্বার্থ সংরক্ষনকারী প্রতিষ্ঠান। টাঙ্গাইল ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা হয় ১৩০১ বাংলা ভিক্টোরিয়া রোডে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন টাঙ্গাইল শাখা প্রতিষ্ঠা হয় আকুর টাকুর পাড়া, টাঙ্গাইলে ১৯৮৭ সালে। সৌখিন মৎস্য শিকারী সমিতিঃ প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৮৪ সালে। জেলা সদর টাঙ্গালে। টাংগাইলের উল্লেখযোগ্য লেখক (জীবিত) নাম ঃ অরুণাভ সরকার জন্মস্থান ঃ মির্জাপুর, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ২৯ মে ১৯৪১ প্রকাশিত গ্রন্থঃ কবিতা- নগরে বাউল (১৯৭৬); কেউ কিছুই জানে না (১৯৮০). নারীরা ফেরে না (২০০৬)। শিশুসাহিত্য- খোকনের অভিযান (কাহিনীকাব্য ১৯৭৮); ইলশেগুঁড়ি (কবিতা ১৯৭৯); ভালুক আর দুই বন্ধু (ছন্দোবদ্ধ প্রতিলেখন, ১৯৮৪); গল্প থেকে গল্প (প্রতিলেখন, ২০০৫); ভালুক আর মৌমাছি (প্রতিলেখন, ২০০৫)। প্রবন্ধঃ সম্পাদনার প্রথম পাঠ (২০০৪)। নাম ঃ আরশাদ আজিজ জন্মস্থান ঃ টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ০১ জানুয়ারি ১৯৫০ প্রকাশিত গ্রন্থ ঃ প্রবন্ধ- গবেষণা : তন্ত্র মন্ত্র কাব্য (১৯৮৫)। শিশুতোষ- দর্শনের গল্প (১৯৮২)। অনুবাদ- আলস্যের জয়গান (১৯৯৪); দুই বিশ্বযুদ্ধের অন্তবর্তীকালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (১৯৯৫); শিক্ষা ও সমাজ কাঠামো (১৯৯৭); বিবাহ ও নৈতিকতা (১৯৯৮); নির্বাচিত রচনা- লর্ড মেকলে (২০০০); ইউরোপের ইতিহাস ১৮০০-১৯৩৫ (২০০৬); ইউরোপের ইতিহাস প্রাচীন কাল থেকে ষোড়শ শতক (২০০৭)। নাম ঃ আরেফিন বাদল জন্মস্থান ঃ পোড়াবাড়ি, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ প্রকাশিত গ্রন্থ ঃ প্রবন্ধ- গবেষণা : ঐতিহাসিক প্রেমপত্র (১৯৭৬); রবীন্দ্রনাথের জীবনে নারী (১৯৯৮)। ছোটগল্প- প্রসবোম্মুখ যন্ত্রণাবিদ্ধ (১৯৭৮); আগামীকাল ভালবাসার (১৯৮০); Short Stories of Arefin Badal (১৯৮২); বাছাই গল্প (১৯৯৪); নিত্যদিন কালগোনা (২০০৪)। উপন্যাস- নিসর্গের সন্তানেরা (১৯৮১); ইমুবাবু (১৯৯৭); ঐ আসে আমিরালী (১৯৯৯); সা’রার ব্রীজ (১৯৯৯); হাকিমউদ্দিন তরফদার (২০০১)। নাটক- কাছের মানুষ কাঁদে (১৯৮৯); ঐ আসে আমিরালী (১৯৯০); ইমুবাবু (১৯৯৭); নানীর সুটক্যাস (২০০৫)। শিশুসাহিত্য (গল্প)- অন্তুর বরসাজা (১৯৮০)। স্মৃতিকথা- তারকালোকের জন্ম ও আমার কথা (২০০৩)। সম্পাদনা- মওলানা ভাসানী (১৯৭৭); বাংলাদেশের নির্বাচিত গল্প (১৯৯০)। কবিতা- অচল কাব্য (২০০৫)। পুরস্কার- মওলানা ভাসানী পদক (১৯৮৭); বাংলাদেশ ফিল্ম মুভমেন্ট পুরস্কার (১৯৯৭); সিডনী খেয়াঘাট কালচারাল ফোরাম এওয়ার্ড (১৯৯৮); ময়মনসিংহ লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি পুরস্কার (২০০৬)। নাম ঃ আলমগীর রেজা চৌধুরী জন্মস্থান ঃ ধলাপাড়া, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ১০ মার্চ ১৯৫৫ প্রকাশিত গ্রন্থ ঃ গল্প- মুক্তিযুদ্ধের গল্প (১৯৭৮); সুদূরের ফানুস (১৯৮০); যুদ্ধ বণিক (১৯৯৭)। কবিতা- ভালোবাসার অমলচিঠি (১৯৮৪)। উপন্যাস- নিসর্গের মানবী (১৯৯৭)। কিশোর উপন্যাস- রাজকন্যার দৌড় (১৯৯৭)। অন্যান্য- তসলীমা নাসরীনের চিঠি : রুদ্র এক পুরুষের সন্ধানে (১৯৯২)। নাম ঃ আলম তালুকদার জন্মস্থান ঃ গালা (ঘাটাইল), টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ০১ জানুয়ারি ১৯৫৬ পেশা ঃ চাকরি। প্রকাশিত গ্রন্থ ঃ ছড়া- ঘুম তাড়ানো ছড়া (১৯৮২); খোঁচান ক্যান? (১৯৯০); ছড়ায় চল্লিশ হাদিস (১৯৯০); ঐ রাজাকার (১৯৯২); প্যাচাল না আলাপ? (১৯৯৬); চাঁদের কাছে জোনাকি (১৯৯৯); যুদ্ধে যদি যেতাম হেরে (২০০১); ডিম ডিম ভূতের ডিম (২০০২)। ছোটগল্প- কেমন করে স্বাধীন হলাম (২০০১); মহাদেশ বাংলাদেশ উপদেশ (১৯৯৮)। সম্পাদনা- ফৌজদারী বিচার পদ্ধতি (১৯৮৭); ছোট ছোট উপাখ্যান হাসিতে আটখান (১৯৯৮); শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল আহসান স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৯); শিশুদের শিশুটামি (২০০০); অবশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা (২০০০); নাইদেশের রূপকথা (২০০২); কিশোর সমগ্র (২০০৪); পাঁচটন জোক্স (২০০৫); ছড়ার মেলা পরীর মেলা (২০০৫) রূপকথার গল্প (২০০৫); ছড়ায় ছড়ায় আলোর নাচন (২০০৫); এককথায় দশকথা (২০০৫); মজার দেশ পাখির দেশ (২০০৩); মজার বাহন যানবাহন (২০০৪); সিন্ধুতলে বিন্দুজ্বলে (২০০৪); ১০ হালি তালিবালি (২০০৫); মিষ্টিভড়া মজার ছড়া (২০০৬); ঘোড়ার ডিম (২০০৬); জাদুঘরের ছড়া (২০০৭); কিশোর সমগ্র-২ (২০০৭)। পুরস্কার- পালক এওয়ার্ড (১৯৯৬); অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৪০৫); চোখ সাহিত্য পুরস্কার, কলকাতা (২০০০); জসীম উদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার (২০০১); কাজী দকাদির নওয়াজ পুরস্কার (২০০৪); চন্দ্রাবতী একাডেমী পুরস্কার (২০০৫); শহীদ বুদ্ধিজীবী সম্মাননা পুরস্কার (২০০৫); মানবিক চেতনা পুরস্কার, ঢাকা (২০০৭)। নাম ঃ আল মুজাহিদী জন্মস্থান ঃ টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ০১ জানুয়ারি ১৯৪৩ প্রকাশিত গ্রন্থ ঃ কবিতা- হেমলকের পেয়ারঅ; ধ্রুপদ ও টেরাকোটা; যুদ্ধ নাস্তি; মৃত্তিকা অতি-মৃত্তিকা; প্রিজন ভ্যান; দিদেলাস ও ল্যাবিরিন্থ; ঈডের হ্যামলেট; প্রাচ্য পৃথিবী; পৃথিবীর ধুলো, সৌর জোনাকি; ভিতা নুওভা, অ্যাকাডেমাসের বাগান; আল মুজাহিদীর শ্রেষ্ঠ কবিতা; আল মুজাহিদীর প্রেমের কবিতা; সন্ধ্যার বৃষ্টি; কালেরবন্দীতে; পাখির পৃথিবী; আলবাট্রাস, ভঙুর গোলাপ; কাঁদো হিরোশিমা কাঁদো নাগাসাকি; পালকি চলে দুলকি তালে। উপন্যাস- প্রথম প্রেম; চাঁদ ও চিরকুট; মিলু এট ও স্যোন্যাটা; লাল বাতির হরিণ; রূপোলি রোদ্দুর; আলোর পাখিটা; ছুটির ছুটি; খোকার আকাশ; খোকার যুদ্ধ। ছোটগল্প- প্রপঞ্চের পাখি; বাতাবরণ; ভরা কটাল মরা কটালের চাঁদ। প্রবন্ধ- গবেষণা : কালান্তরের যাত্রী। শিশুসাহিত্য- হালুম হুলুম; তালপাতার সেপাই; শেকল কাটে খাঁচার পাখি; সোনার মাটি রূপোর মাটি; ইস্টিশানে হুইসেল। প্রবন্ধ- সমাজ ও সমাজতত্ত্ব। অনুবাদ- কাইফি আজমির কবিতা; পৃথিবীর কবিতা; আহমদ মরাজের কবিতা; উর্দূ কবিতা; হিন্দি কবিতা; হাইনরীশ হাইনে-র কবিতা। পুরস্কার- জীবনানন্দ দাশ একাডেমী পুরস্কার; কবি জসীম উদ্দীন একাডেমী পুরস্কার; মাইকেল মধুসূদন একাডেমী পুরস্কার; শেরে বাংলা সংসদ পুরস্কার; জয়বাংলা সাহিত্য পুরস্কার; একুশে পদক (২০০৩)। নাম ঃ আশরাফ সিদ্দিকী জন্মস্থান ঃ নাগবাড়ী, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ০১ মার্চ ১৯২৭ পেশা ঃ অধ্যাপনা ও চাকরি (অবসরপ্রাপ্ত)। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ তালেব মাষ্টার ও অন্যান্য কবিতা (১৯৫০); সাত ভাই চম্পা (১৯৫৫); বিষকন্যা (১৯৫৫); উত্তর আকাশের তারা (১৯৫৮) ইত্যাদি। উপন্যাস- শেষ কথা কে বলবে (১৯৮৮); গুণীন (১৯৮০); আরশিনগর (১৯৮২); উপন্যাস সমগ্র (২০০২)। গল্প- রাবেয়া আপা (১৯৬২); গল্প সমগ্র (২০০২)। প্রবন্ধ- গবেষণা :- বেঙলী রিডলস (১৯৬১); লোকসাহিত্য (১৯৬৩); কিংবদন্তীর বাংলা (১৯৭৫) চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস (১৯৮৬) ইত্যাদি। শিশু সাহিত্য- যুগের কথা (১৯৫৪); ছড়ার মেলা (১৯৬০); কাগজের নৌকা (১৯৬২); সিংহের মামা ভোম্বল দাস (১৯৬৩); আমার দেশের রূপকাহিনী (১৯৬৪) ইত্যাদি। পুরস্কার- All Bengal Essay Competion, Gold Medal (১৯৪৮), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৪); ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬৬); একুশে পদক (১৯৮৮); জাতীয় সাহিত্য পদক (১৯৮৯); এশিয়াটিক সোসাইটি পদক (২০০৪) ইত্যাদি। নাম ঃ খান মাহবুব জন্মস্থান ঃ করাতিপাড়া, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ০৩ মে ১৯৭০ পেশা ঃ প্রকাশনা ব্যবসা। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ টাঙ্গাইল পরিচিতি (২০০৯); টাঙ্গাইল স্থান নাম বিচিত্রা (২০০৮) এ সময়ের অর্থনীতি (২০০৭) একুশ শতকের অর্থনীতি (২০০০) । সম্পাদনা- বিমল গুহের কবি ও কবিতা (২০০২); আবু করিমের বঞ্চাশ বছর (২০০৪); ইত্যাদি। পুরস্কার- নির্ধারিত বক্তৃতা, কলেজ পর্যায়ে জাতীয় পুরস্কার (১৯৯২)। টাংগাইল জেলা পরিষদ সম্মানণা (২০০৮)। নাম ঃ চৌধুরী হাবীবুর রহমান সিদ্দিকী জন্মস্থান ঃ ভদ্রবাড়ি, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ০১ জানুয়ারি ১৯৩৪ পেশা ঃ চাকরি। অতিরিক্ত সচিব (অবপ্রাপ্ত), অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ কবিতা- তাজমহল (১৩৭৫); হিমালয় (১৩৮৯); জনতায় নির্জনতা (১৩৯০); স্বাধীনতা (১৯৯৩); কবিতাসমগ্র (২০০৩) ইত্যাদি। উপন্যাস- ঝরনা (১৯৬৩); ঘর-সংসার (১৯৬৫); স্মৃতি বড়ই মধুর (২০০৪) ইত্যাদি। ছোটগল্প- কথা কওনা কেন বউ (১৯৫০); ভঙ্গুর নদী (১৯৫৭); মুক্তিযুদ্ধের গল্প (১৯৭২) ইত্যাদি। প্রবন্ধ- গবেষণাঃ হযরত মোহাম্মদ (দঃ)-এর সৈনিক জীবন (১৩৭৯); রবীন্দ্র কাব্যে গঙ্গা-পদ্মা-ইছামতী নদী (১৩৮২) ইত্যাদি। পুরস্কার- ময়মনসিংহ সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৫১); আদমজী পুরস্কার (১৯৫৪); অগ্রণী পুরস্কার (১৯৫৮); পল্লীকবি জসীমউদ্দীন পুরস্কার (১৯৯৩) ইত্যাদি। নাম ঃ জাহাঙ্গীর ফিরোজ জন্মস্থান ঃ বীরপুশিয়া, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ০৬ এপ্রিল ১৯৫৫ পেশা ঃ সাংবাদিকতা। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ কবিতা- বদ্ধমাতাল রোদে (১৯৮৬); যে ছিলো প্রাণের জরুরি (২০০১); চাকরিজীবীদের কোন স্পার্টাকাস নেই (২০০৩); অনুবিশ্বের মেঘমালা (২০০৩); লালনের পাখি উড়ে যায় (২০০৬) ইত্যাদি। নাম ঃ মামুনর রশীদ জন্মস্থান ঃ ভাবনদত্ত, ঘাটাইল, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ পেশা ঃ সাস্কৃতিচর্চা ও ব্যবসা। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ নাটক- ওরা কদম আলী (১৯৭৮); ওরা আছে বলেই (১৯৮০); মে দিবস (১৯৮১); ইবলিশ (১৯৮২); এখানে নোঙর (১৯৮৪); গিনিপিগ (১৯৮৫) অববাহিকা (১৯৮৬); নীলা (১৯৮৭) সমতট (১৯৯০); পাথর (১৯৯৩) ইত্যাদি। পুরস্কার- বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২); আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯০)। নাম ঃ মাহবুব সাদিক জন্মস্থান ঃ আইসরা, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ২৫ অক্টোবর ১৯৪৭ পেশা ঃ অধ্যাপনা। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ কবিতা- সন্ধ্যার স্বভাব (১৯৭৬); স্বপ্নচৈতন্যের ডালপালা (১৯৮৩); সুন্দর তোমার নির্জনে (১৯৮৫); কবিতা সংগ্রহ (১৯৮৫) নিরালোকে জলঝর্ণার ধ্বনি (২০০৬) ইত্যাদি। ছোটগল্প- জ্যোৎস্নাবোনা রাত (১৯৯৭)। প্রবন্ধ- গবেষণা: বুদ্ধদেব বসুর কবিতাঃ বিষয় ও প্রকরণ (১৯৯১); জীবনানন্দঃ কবিতার নান্দনিকতা (২০০৪) ইত্যাদি। কিশোর সাহিত্য- তরুদের একাত্তর (১৯৯৪); স্বপ্নের বনে বনে (১৯৯৮); আমরা করবো জয় (১৯৯৯)ইত্যাদি। পুরস্কার- নাজ স্মৃতি স্বর্ণপদক (১৯৯৪); খালেদ মোশাররফ স্মৃতিপদক (১৯৯৭); ভাসানী পদক (২০০৫); টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পুরস্কর (২০০৬); বাংলা একাডেমী পুরস্কার (২০০৮)। নাম ঃ মাহবুব হাসান জন্মস্থান ঃ আইসরা, বাশাইল, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ২৮ এপ্রিল ১৯৫৪ পেশা ঃ সাংবাদিকতা। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ কবিতা- তন্দ্রার কোলে হরিণ (১৯৮৪); তোমার প্রতীক (১৯৮৬); স্বপ্নগুলো বিক্রি হয়ে গেছে (১৯৯৯); মাহবুব হাসানের কবিতা (২০০১); চাঁদে পেয়েছে আমাকে সেই ছেলেবেলা (২০০৬) ইত্যাদি। উপন্যাস- পরী (১৯৮৫); অর্ধসত্য (১৯৮৮); কালসন্ধ্যা (১৯৯০); প্রেম রহস্য (১৯৯৩); যু্দ্ধভাসান (১৯৯৪); ডাঁশ (১৯৯৫); ফুল কাহিনী (২০০৫)। প্রবন্ধ- গবেষণাঃ নজরুলের রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা (১৯৯৭); মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের কবিতা (২০০১); কবিতার উপাদান(২০০৪) ইত্যাদি। পুরস্কার- আসাফ-উদ-দৌলা রেজা স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪); কৃতি ফুটবলার সামাদ পদক (২০০৩); অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক (২০০৫) ইত্যাদি। নাম ঃ মাহমুদ কামাল জন্মস্থান ঃ আকুর টাকুর, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ২৩ অক্টোবর ১৯৫৭ পেশা ঃ অধ্যাপনা। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ কবিতা- কবিতার মতো কিছু কথা (১৯৮৭); শব্দেরা কখনো মানতে চায় না ছন্দাছন্দ (১৯৯০); পরকীয় (১৯৯৭); স্বপ্নের রাজকন্যা (১৯৯৮); দ্বিতীয় জীবন (২০০১); বিকেলের সকল চড়ুই (২০০৩); নির্বাচিত কবিতা (২০০৫); মুহূর্তের কবিতা (২০০৬) ইত্যাদি। প্রবন্ধ- গবেষণাঃ নাট্যকলার উৎসমূল ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০০৪); চলমান রাজনীতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০০৫) ইত্যাদি। ভ্রমন সাহিত্য- দেশের বাড়ি পাশের বাড়ি (২০০৬)। সম্পাদনা-ষাটের দশকের কবিতা (১৯৯১); সত্তর দশকের কবিতা (১৯৯৬); বাংলা কবিতা উৎসব স্মারক গ্রন্থ (২০০৩); কামাক্ষা নাথ সেন স্মারক গ্রন্থ (২০০৪) ইত্যাদি। পুরস্কার- বাংলাদেশ পরিষদ পুরস্কার ((১৯৭৭); ভোরের কাগজ পাঠক ফোরাম পদক (২০০১); সৌহার্দ্য কবিতা উৎসব, কলকাতা পদক (২০০২) ইত্যাদি। নাম ঃ রফিক আজাদ জন্মস্থান ঃ গুণী, ডাকঘর- জাহিদগঞ্জ, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ পেশা ঃ কবি, সাংবাদিক ও চাকরি। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ কবিতা- অসম্ভবের পায়ে (১৯৭৩); চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া (১৯৭৭); ভালবাসার কবিতা (১৯৮৩); প্রেম ও বিরহের কবিতা (১৯৯৪); কণ্ঠে তুলে আনতে চাই (১৯৯৬); শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০০৭) ইত্যাদি। সম্পাদনা- দুই বাংলার কবিতায় মা (১৯৯৭)। পুরস্কার- বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১); সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৯); কবি আহসান হাবীব পুরস্কার (১৯৯১); কবি হাসান হাফিজুর রহমান পুরস্কার (১৯৯৬); বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা (১৯৯৭)। নাম ঃ রাশেদ রহমান জন্মস্থান ঃ রসুলপুর, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ০৫ নভেম্বর ১৯৬৭ পেশা ঃ চাকরি। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ গল্প- আগুনঘেরা নদী (১৯৯৭); সুন্দর পাপ ও বিলাসভূমি (২০০০); একদিন শুকনো নদীতে (২০০৩); অন্ধকারে বৃষ্টির গান (২০০৫)। উপন্যাস- স্বপ্ন কিংবা স্বপ্নের ছায়া (২০০৬)। সম্পাদনা- উতঙ্ক। নাম ঃ রেজোয়ান সিদ্দিকী জন্মস্থান ঃ এলাসিন, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ পেশা ঃ চাকরি। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ উপন্যাস- ভুল জ্যোৎস্নায় পদলেহন (১৯৮৩); রোদের পিপাসা (১৯৮৯); পালাও জুলিয়া (১৯৮৯); এখানে দাঁড়িয়ে আছি (১৯৯৪); যুদ্ধ (১৯৯৫) ইত্যাদি। ছোটগল্প- ভালবাসি না (১৯৯৬)। নাটক- কোথায়ও ক্ষরণ (১৯৮৯); বিরান জনপদে (১৯৯৪); রোবট মন (২০০১); ভালোবাসার কর্মসূচি (২০০২); শুধু তোমার জন্য (২০০৪)। প্রবন্ধ- গবেষণাঃ পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনঃ ১৯৪৭-১৯৭১ (১৯৯৫); গণতান্ত্রিক পরিবেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি (১৯৯৬); Cultural Colonization : India-Bangladesh Issue (১৯৯৬); কথামালার রাজনীতিঃ ১৯৭২-১৯৭৯ (১৯৯০); বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম (১৯৯৫)। ভ্রমন কাহিনী- চীন ভেতর থেকে বদলে যাচ্ছে (১৯৮৭); সোভিয়েট ইউনিয়নে কেন এই পরিবর্তন (১৯৯২)। ইত্যাদি। শিশু সাহিত্য- চলো যাই সবুজের রাজ্যে (২০০১); বিপন্ন প্রকৃতি (২০০১); প্রাণীজগৎ (২০০১); তোমার শরীর (২০০১); চলতে ফিরতে বিজ্ঞান (২০০১)। জীবনী- রাসপুটিন (১৯৯০)। নাম ঃ সাযযাদ কাদির জন্মস্থান ঃ দেলদুয়ার, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ১৪ এপ্রিল ১৯৪৭ পেশা ঃ সাংবাদিকতা। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ কবিতা- যথেচ্ছ ধ্রুপদ (১৯৭০); দরজার কাছে নদী (১৯৯২); আমার প্রিয় (১৯৯৫); কবিতা সমগ্র (২০০১); জানে না কেউ (২০০৩); আলো আমার (২০০৫)। ছোটগল্প- চন্দনে মৃগপদচিহ্ন (১৯৭৬); অপর বেলায় (১৯৯৭)। শিশুসাহিত্য- তেপান্তর (১৯৭১); মনপবন (১৯৯০); রঙবাহার (১৯৯১); বীরবল নামা (২০০২); উপকথন আবারও (২০০৬) ইত্যাদি। পুরস্কার- একুশে স্মৃতি স্বর্ণপদক (১৯৯৪); কবি জসীমউদ্দীন পুরস্কার (১৯৯৭); নন্দিনী সাহিত্য পুরস্কার (২০০১); বাচসাস পুরস্কার (২০০২); টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী স্কুলের ‘গুণী সম্মাননা’(২০০৫)। নাম ঃ সোহরাব পাশা জন্মস্থান ঃ ফুলহারা, টাংগাইল জন্ম তারিখ ঃ ০১ জুলাই ১৯৫৬ পেশা ঃ অধ্যাপনা। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ কবিতা- পাথর রাত্রি (১৯৮৮); আনন্দ বাড়ি নেই (১৯৯৩); বিকেলে জলপাই রোদে (২০০২); শরবিদ্ধ স্বপ্নবেলা (২০০৪)। সম্পাদনা- বিকাশ (১৯৭৩); সাহিত্য মেলা (১৯৮১-৮৫); শিশু মেলা (১৯৮১-৮৫)।

রাজবাড়ী জেলাঃ   রাজবাড়ী জেলার ভাষা ও সংস্কৃতি

রাজবাড়ী জেলা প্রাচীন ইতিহাস ধারণ করে আছে।পদ্মা, চন্দনা, হড়াই, গড়াইয়ের সমতলে পলল মাটির উর্বর ভূমিতে আবহমানকালের প্রাচীন ঐতিহ্যের লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে।রাজবাড়ী জেলার মানুষের মধ্যে জীবন-যাপনে, খাদ্য, কাজকর্ম, চলাচল, বাসভূমি বৈচিত্র আছে। এ ছাড়া ভাবপ্রকাশ, ব্যবহার রীতি, আদানপ্রদান এবং ভাষা ব্যবহারেও অঞ্চলভিত্তিক বিশেষত্ব আছে। মূলত এগুলো তাদের শত শত বৎসরের লোকজ মানুষের মটিফের প্রকাশ। রাজবাড়ী জেলার ভৌগলিক অবস্থানে কুষ্টিয়া, যশোহর, ফরিদপুর, পাবনা ও মানিকগঞ্জ এর প্রভাবে প্রভাবিত। এসব জেলা থেকে কম বেশী মানুষের রাজবাড়ী জেলায় অভিবাসিত হলেও বেশী পরিমাণ অভিবাসন রয়েছে পাবনা জেলা থেকে। ষাটের দশকে কুমিল্লা, নোয়াখালী থেকেও কিছু পরিমাণ মানুষের অভিবাসন ঘটে রাজবাড়ী জেলায়। রাজবাড়ী ঐতিহাসিকভাবে বঙ্গের এলাকা। বঙ্গ ছিল ভাটির দেশ। বঙ্গ বলতে সমতটীয় বর্তমান রাজবাড়ী, ফরিদপুর, যশোহরকে বোঝান হয়। বঙ্গের মানুষের সাধারণ জীবনচারিতা এরা সহজ সরল আড়ম্বরহীন জীবনে অভ্যস্ত। ইষ্টিকুটুম বাড়ীতে এলে সবাই আনন্দিত হয়। চাউলের রুটির সাথে মুরগীর গোস্ত, সে সাথে চিতাই পিঠা, প্রিয়। ধুপি পিঠা, কুশলীপিঠা তৈরী করে। ইলিশ, কৈ, মাগুর, শোল, বোয়াল এসব গ্রামীণ মানুষের প্রিয় খাবার। এককালে এলাকাটি হিন্দু প্রধান এলাকা ছিল। এখনও অনেক হিন্দু বসবাস করে। হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে একে অপরের সাথে ভাব ভালবাসার অভাব নেই। মুসলমানদের বাড়ীর দাওয়াত হিন্দু খায়, হিন্দুর নিমন্ত্রণে মুসলমান তাদের বাড়ীতে যায়।  মুসলমান একে অপরকে দেখলে সালাম এবং হিন্দু আদাব প্রদান করে। তবে সকলেই জীবনাচরণ একসাথে, এক  মাঠে একঘাটে।

ভাষা ব্যবহারে রাজবাড়ীর মানুষের বিশেষত্ব রয়েছে। এরা ভাইকে বাই, উঠানকে উঠোন, কেমন করে অর্থ্যাৎ ক্যাম্বা, যেমনকে অর্থ্যাৎ য্যাম্বা, খাওয়াকে বলে খাবনে যাওয়াকে বলে যাবনে, যাওনা কেন বলবে যাসনে কেন, আসিসনে কেন, হওয়াকে বলে হয়া, যাওয়াকে বলে যাওয়া, বেগুনকে বলে বাগুন, লাউকে কদু, কুকুরকে কুত্তো, কুমড়াকে কুমড়ো, তেলেকে তেলো বলে। আবার পাবনার প্রভাবিত অনেকে ‘‘স’’ এর স্থলে ‘‘হ’’ উচ্চারণ করে যেমন সবকে হব, সুঁইকে হুই, সন্ধাকে হন্দে ভাষা ব্যবহার করে।

এরূপ নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতির প্রবাহ রয়েছে রাজবাড়ী জেলায়। এ ভাষাতেই রচিত হয়েছে রাজবাড়ী জেলার লোকজ গান, খেলা, মেলাসহ জীবনের দৈনন্দিন বিষয়।

 

শেরপুর জেলাঃ অধ্যক্ষ আবুল কাশেম বাংলাদেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে অধিষ্ঠিত করার জন্য সারা জীবন চেষ্টা করেছেন । এ লক্ষ্যে তিনি জীবনভর পরিশ্রম করেছেন। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭, ইসলামিক সংস্কৃতি ও চেতনাকে সামনে রেখে সমমনা শিক্ষাবিদ, লেখক ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে "তমুদ্দিন মজলিস" প্রতিষ্ঠা করেন ।১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭, তমুদ্দিন মজলিস "পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা:বাংলা না উর্দু?" শিরোনামে একটি বুকলেট বের করে। যার গ্রন্থকার কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমেদ ।এই বুকলেট সকলের হাতে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়েছিল । অধ্যাপক আবুল কাশেম বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অফিস- আদালতে একমাত্র ভাষা হিসেবে ব্যবহারের উপর জোর দেন। পাশাপাশি বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রচারণা চালান ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ক্লাসে তিনিই প্রথম বাংলায় পাঠদান করেন ।

 

ফরিদপুর জেলাঃ সৃষ্টির পর থেকেই পৃথিবীর সব মানব গোষ্ঠিই তাদের নিজ নিজ কামনা-বাসনা, চাওয়া-পাওয়া, ব্যথা-বেদনা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বিরাহ প্রকাশ করে আসছে।বিভিন্নভাবে প্রকাশের এই মাধ্যমই হচ্ছে সাহিত্য। যে জাতির ভাসা, সাহিত্যসমৃদ্ধ সে জাতি তত সমৃদ্ধ। আমরা বাঙালী আমাদের অতীত সাহিত্যের ঐতিহ্যরয়েছে। লোক সংস্কৃতি বাংলা সাহিত্যের একটি বিশাল ভান্ডার। ফরিদপুরের নিজস্বসংস্কৃতিও এক্ষেত্রে উল্লেখ করার মত। লোকগীতি, লোকসংগীতি, পল্লীগীতি, বাউলগানের বিখ্যাত মরমী লোক কবি ও চারণ কবিদের লালন ক্ষেত্র এ ফরিদপুরে। এজেলার অনুকুল আবহাওয়া ও পরিবেশ এদের লালন করেছে আর যুগে যুগে উপাদান ওউপকরণ সরবরাহ করে মরমী ও লোক কবিদের সাধনা ক্ষেত্রে অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে।পল্লী কবি জসীমউদ্দিন, তাইজদ্দিন ফকির, দেওয়ান মোহন, দরবেশ কেতারদি শাহ, ফকির তীনু শাহ, আজিম শাহ, হাজেরা বিবি, বয়াতি আসাদুজ্জামান, আবদুর রহমানচিশতী, আঃ জালাল বয়াতি, ফকির আব্দুল মজিদ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের সংস্কৃতাঙ্গনে ফরিদপুরের লোকগানের উল্লেখযোগ্য ভহমিকা রয়েছে।এর প্রমাণ পাওয়া যায় মুহম্মদ মুনসুর উদ্দিনের ‘হারামনি’বাংলা একাডেমীপ্রকাশি লোক সাহিত্য ও ফোকল্যের সংকলন সমূহ, আশুতোষ ভট্রাচার্যের, বাংলারলোক সাহিত্য, উপেন্দ্রনাথ ভট্রাচার্যের, বাংলার বাউল ও বাউল গান, ডঃ আশরাফসিদ্দিকীর, লোক সাহিত্য, জসীম উদদীনের জারীগান ও মুশিদ গান,প্রভৃতি লোকগবেষনামূলক গ্রন্থে।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব :

·পল্লীকবি জমীস উদদীন

·তাইজদ্দিন ফকির

·দেওয়ান মোহন

·দরবেশ কেতাবদি শহ

·ফকির তীনু শাহ

·আজিম শাহ

·হাজেরা বিবি

·বয়াতি আসাদুজ্জামান

·আবদুর রহমান চিশতী

·আঃ জালাল বয়াতি

·বাউল গুরু মহিন শাহ

·ফকির আব্দুল মজিদ

·কোরবান খান

·ছইজদ্দিন ফকির

·আজাহার মন্ডল

·আব্দুর রাজ্জাক বয়াতি

·বাউল রহমান সাধু

·মেঘু বয়াতি

·ডাঃ হানিফা

·শেখ সাদেক আলী